ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তুরস্ক থেকে যে বার্তা দিলো বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩
তুরস্ক থেকে যে বার্তা দিলো বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা

ঢাকা: ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক থেকে উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দলটির প্রধান ও বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস আ্যন্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা। দেশটির আদিয়ামান শহর থেকে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ৫৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওবার্তা দিয়েছেন তিনি।

ভিডিওবার্তায় দিনমনি শর্মা বলেন, আমরা আদিয়ামান শহরের একটি পাঁচ তলা বিধ্বস্ত ভবনের সামনে বাংলাদেশ টিম নিয়ে উদ্ধারকাজ করছি। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ টিম এখানে কাজ করছে।

আমরা এখানে লাইভ ডিকটিম (জীবিত) এবং ডেড ভিকটিমের (মৃত) সন্ধান পেয়েছি। আমরা এখানে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে দেখতে পারছেন আমাদের উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন।

উদ্ধার অভিযান নিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা গতকাল (১০ ফেব্রুয়ারি) পার্শ্ববর্তী একটি বিল্ডিং থেকে একটি লাইভ ভিকটিম এবং চারটি ডেড ভিকটিম উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। সবাই এখানে সর্বাত্মকভাবে আমাদের সহযোগিতা করছে এবং আমরা আমাদের কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছি। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফায়ার সার্ভিস শুক্রবার জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার বিমানযাত্রা শেষে তুরস্কের আদানা বিমানবন্দরে পৌঁছায় তাদের বাহিনীর ১২ সদস্যের দল। সেখান থেকে বাসে করে ৩৫০ কিলোমিটার দূরের গন্তব্য আদিয়ামানে যায় দলটি। শুক্রবার থেকে দেশটিতে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া শুরু করেছেন দলের সদস্যরা।

উল্লেখ্য গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও প্রতিবেশী সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে দুই দেশেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু ভবন ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেকে ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন।

ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সীমান্তবর্তী সিরিয়ার অঞ্চলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৪ হাজার ৪৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে শুধু তুরস্কেই ২০ হাজার ৬৬৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। আর প্রতিবেশী সিরিয়ায় তিন হাজার ৫১৩ জন নিহত হয়েছেন।

দেশটির কাহরামানমারস প্রদেশে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। সেখান থেকে বিশ্ববাসীকে সর্বশেষ তথ্য জানাচ্ছেন আল জাজিরার প্রতিবেদক রেসুল সেরদার। তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে আহত-নিহত অনেক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততই ভয়ানক হয়ে উঠছে। চারদিকে এখন মরদেহের গন্ধ। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ। ভূমিকম্পের পর এরই মধ্যে মধ্যে পাঁচ দিন গড়িয়েছে, সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এখন যদি কাউকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, সেটি অলৌকিক ঘটনা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৬৭ জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল জুড়ে ৩১ হাজার উদ্ধারকারী কাজ করছেন। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ভূমিকম্পের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

এদিকে সিরিয়ায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা ও সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশগুলোয় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৫১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৭ বলে জানা গেছে।

দেশটির বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে বেসামরিক উদ্ধারকারী দল হোয়াইট হেলমেটস। সংস্থাটি জানিয়েছে, এ এলাকায় ভূমিকম্পের নিহত হয়েছে ২ হাজার ১৬৬ জন।

 শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক ঘোষণায় হোয়াইট হেলমেটস জানিয়েছে, তারা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে টানা ১০৮ ঘণ্টা তল্লাশি ও উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন। সেখানে আর কোনো মৃত মানুষ নেই- এমনটিই বিশ্বাস করছেন তারা।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় এমন পরিস্থিতিতে বহু দেশ ও সংস্থা সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। প্রায় ১০০টি দেশ তুরস্ককে সহায়তা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভূমিকম্পের ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য ৯৯টি দেশ থেকে তারা প্রস্তাব পেয়েছেন। ৬৮ দেশ থেকে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের ৮ হাজার ৩২৬ জন কর্মী দেশটিতে নিজেদের কার্যক্রম চালু রেখেছে

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩
এজেডএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।