ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অটোরিকশা ছিনিয়ে নিতে চালককে হত্যা করে দুই ছিনতাইকারী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
অটোরিকশা ছিনিয়ে নিতে চালককে হত্যা করে দুই ছিনতাইকারী

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মো. ইস্রাফিল (১৮) নামে এক অটোরিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধারের ২৭ দিনের মাথায় ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।  

অটোরিকশা (মিশুক) ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে চালককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডে ইউসুফ (৪৫) ও রুবেল (৩০) নামে দুইজন অংশ নেয়। এদের মধ্যে পুলিশ রুবেলকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি উদ্ধার করে ক্রেতা বেলাল হোসেনকেও (২৭) গ্রেফতার করে পুলিশ।  

গ্রেফতার বেলাল সদরের টুমচর ইউনিয়নের মধ্য টুমচর গ্রামের মৃত তোফায়েল আহমেদের ছেলে। রুবেল কমলনগর উপজেলার চরলরেঞ্চ গ্রামের হোসেন আহাম্মদের ছেলে।  

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।  

পুলিশ জানায়, গত ১৯ জানুয়ারি সকালে কমলনগর উপজেলার চরলরেঞ্চ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ টু চৌধুরী বাজার সড়কের পাশে ক্ষেতের মধ্যে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের মরদেহ পাওয়া যায়। পরে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। মরদেহটি ইস্রাফিল নামে এক অটোরিকশাচালকের ছিল। ঘটনার পর তার অটোরিকশাটি নিখোঁজ হয়। ইস্রাফিল উপজেলা চরজাঙ্গালিয়া গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে। ওইদিন জেলা সদর হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।  

এ ঘটনায় ওইদিন তার বাবা অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কমলনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশ পরিদর্শক জাফর আহমদকে।  

এসপি জানায়, ঘটনার পর দ্রুত আসামি শনাক্তে এবং অটোরিকশা উদ্ধারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) সোহেল রানাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম গঠন করা হয়। তথ্য এবং প্রযুক্তির সহায়তায় ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে সদর উপজেলার টুমচর এলাকা থেকে বেলাল নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ইস্রাফিলের অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়েছে।  

বেলাল পুলিশকে জানায়, ১৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার সৎ ভাই ইউসুফ ও রুবেল নামে একজন ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তা বাজারে এসে তার কাছে অটোরিকশাটি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে।  

পুলিশ জানায়, বেলালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইউসুফকে গ্রেফতারের উদ্দেশে চট্টগ্রামে অভিযান চালানো হয়। তবে সে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পুলিশের অন্য আরেকটি টিম সোমবার (১৩ ফ্রেব্রুয়ারি) রাতে কমলনগরের চরলরেঞ্চ এলাকা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করে।  

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি রুবেল জানায়, গত ১৮ জানুয়ারি রাত সোয়া ৭টার দিকে ইস্রাফিলের অটোরিকশাটি আসামি ইউসুফ কমলনগরের চরলরেঞ্চ বাজার থেকে চৌধুরী বাজারে যাওয়ার জন্য ভাড়া করে। পথে গনি মিয়ার ব্রিক ফিল্ডের সামনে থেকে ইউসুফ তার সহযোগী রুবেলকে ওই অটোরিকশাতে ওঠায়। পথে অটোরিকশা চালকসহ তিনজনই একটি দোকানে চা-পান করে। রাত পৌনে ৯টার দিকে নবীগঞ্জ টু চৌধুরী বাজারের পাকা রাস্তার পশ্চিমে এলে ইউসুফ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে অটোরিকশা থেকে নামে। চালক ইস্রাফিল চালকের আসনে বসা ছিল। এ সময় ইউসুফ এবং রুবেল অটোরিকশার চালক ইস্রাফিলকে পেছন থেকে ঘাড় মটকে দেয়। পরে তাকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহটি ক্ষেতের মধ্যে ফেলে অটোরিকশা এবং ইস্রাফিলের পকেটে থাকা ৬০০ টাকা ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যায়। ওইরাতে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ চৌরাস্তা এলাকায় এনে অটোরিকশাটি ইউসুফের সৎ ভাই বেলালের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। রুবেল অটোরিকশা বিক্রির ১৫ হাজার টাকা নেয়, বাকি ২৫ হাজার টাকা এবং লুণ্ঠিত মালামাল নেয় ইউসুফ।  

পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, এ মামলায় আসামি তিনজন। এর মধ্যে ইউসুফ ও রুবেল হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। বেলাল চোরাই অটোরিকশাটি ক্রয় করেছে, তাই সেও অপরাধী। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। প্রধান আসামি ইউসুফকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।