ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী খোকা গ্রেফতার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী খোকা গ্রেফতার

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী মো. জাছিজার রহমান ওরফে খোকাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-২।  

দীর্ঘ ১৪ বছর পলাতক থাকার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

 

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (বাংলাদেশ) কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জাহিজার রহমান ওরফে খোকাকে গ্রেফতার করা হয়।  

গ্রেফতার জাছিজার রহমান ওরফে খোকা গাইবান্ধার সদর থানার মৃত মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডলের ছেলে।  

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রাজাকার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে গ্রেফতার আসামি জাছিজার রহমান মানবতাবিরোধী কাজে সরাসরি অভিযুক্ত। তিনিসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীরা যুদ্ধকালীন সময়ে রাজাকার, আলবদর এবং পিস কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী জাছিজার রহমান ওরফে খোকাসহ রাজাকার বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা গাইবান্ধা সদরে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট- অগ্নিসংযোগ, ভয়-ভীতিসহ আতঙ্ক ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কাজ করেছিলেন।  

অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই রাজাকাররা একাত্তরের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে গাইবান্ধার সদর এলাকার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামসহ মোট ৮ টি গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলেন। মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন ও নবীর হোসেনসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে গিয়েও হত্যা করেছে তারা। তিনিসহ অন্যান্য রাজাকাররা মোট ২১ জনকে হত্যা, শতাধিক বাড়ি-ঘর লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ এবং কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের উপর নৃশংসভাবে হামলা চালায়। এছাড়া সাহাপাড়া ইউনিয়নের তিন থেকে চারশত সংখ্যালঘুকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন খোকা।

এসব ঘটনায় ২০০৯ সালে হত্যা- গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, ভয়-ভীতি এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ধর্মান্তর ও দেশান্তরে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী কাজে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার আসামি জাছিজার রহমান ও তার বাবাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।  

পরে আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন। এই আদেশের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কর্তৃক একটি মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (বাংলাদেশ) মামলা দায়ের হয়।

আসামির বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল মো. জাছিজার রহমান ওরফে খোকার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।  

দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টেবর জাছিজার রহমান ওরফে খোকাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল-১।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামি মো. জাছিজার রহমান ওরফে খোকা জানায়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকার পর আদালত কর্তৃক জামিন নামঞ্জুর হলে তখন তিনি আত্মগোপনে চলে যায়। তিনি বিভিন্ন সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। তার ছেলেরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ দিয়ে সহায়তা করতেন। এভাবেই তিনি পলাতক জীবনযাপন করে আসছিল।

গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩
এসজেএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।