ঢাকা: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ডাক্তার এস এ মালেক স্মরণে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
রাজধানীর কলাবাগানে বঙ্গবন্ধু পরিষদে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে গেলেও তার সরকার দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি। একদিন এই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পর এক দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ড. এস এ মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শটাকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যে কয়জন অবদান রেখে গেছেন তারমধ্যে ডা. এস এ মালেক একজন। অত্যন্ত বৈরি পরিবেশের মধ্যেও তিনি জাতির পিতার আদর্শটাকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও নেতা-কর্মীদের শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের জানানোর বিষয়টি তিনি অনেক দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ডা. এস এ মালেকের লেখনির হাত ভালো ছিল। সেই লেখনির মাধ্যমে জাতির পিতার আদর্শকে তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যত বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাও তিনি লিখে গেছেন। কাজেই সেগুলো আমি মনেকরি আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ হিসেবে থাকবে।
ড. মালেক ও মোহাম্মদ হানিফ তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, স্কুল জীবন থেকে রাজনীতি করলেও তিনি কখনো আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন তা ভাবেননি। কিন্তু, ১৯৮১ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে দল আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে সভাপতি করায় আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিতে হয়েছিল।
৭৫ পরবর্তী সময়ে ডা. মালেকের ভুমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এ জতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোস্তাক নিজেকে অবৈধভাবে রাষপতি ঘোষণা করে অনেক সংসদ সদস্যকে আলোচনার জন্য ডেকেছিল। ডা. মালেক নিজে সেখানে যাননি এবং অন্য অনেককে সেখানে যোগদান থেকে বিরত রাখেন। পাশাপাশি দেশের মধ্যে খুনীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, ফলে এক সময় ভারতে তাকে আশ্রয় নিতে হয়।
রাজনৈতিক নেতা হলেও কোন ধরনের অহমিকা তার ছিলনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা প্রয়াত ডা. মালেক সম্পর্কে বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এই উপদেষ্টা খুব সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন এবং যা অর্থ পেতেন তাই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতেন। একজন এমবিবিএস চিকিৎসক হয়েও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন বলে তার রোগ নির্ণয় এবং নিরাময় অত্যন্ত কার্যকর ছিল, এক সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেও তার হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন বলেও জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
আলোচনা সভায় সিনিয়র সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অজিত কুমার সরকার ডা. এস এ মালেক ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ- আলোয় আঁকা সাহসী মানুষের প্রতিকৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.আব্দুল খালেক এবং ডা. এস এ মালেকের ছেলে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
এমইউএম/এসএ