ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

‘শুধু পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ছাড়া কেউ আর খোঁজ নেয় না আমাদের’

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
‘শুধু পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ছাড়া কেউ আর খোঁজ নেয় না আমাদের’

ফরিদপুর: ‘যে পরিবারের মানুষ হারায়, সে পরিবার বুঝে প্রিয়জন হারানোর বেদনা কত কষ্টের। নিজ চোখে বাবার লাশ দেখে যে কষ্ট পেয়েছি, তা আজও বহন করে বেড়াতে হচ্ছে।

বাবা-মাকে হারানোর যে বেদনা, যারা হারিয়েছে শুধু তারাই জানে। খুবই কষ্টে রয়েছে আমাদের মতো পরিবারগুলো। শুধু পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ছাড়া কেউ আর খোঁজ নেয় না আমাদের। ’ 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন প্রয়াত পুলিশ সদস্য জামাল মাতুব্বরের মেয়ে মিতু আক্তার।  

এসময় ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি তাদের মতো পরিবারের প্রতি আরও যত্নশীল হওয়ার অনুরোধ জানান।  

বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২৩ ’-তে প্রয়াত বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন মিতু আক্তার।  

কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে সম্মাননা প্রদান, দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করে ফরিদপুর জেলা পুলিশ।

এতে অংশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন মিতু আক্তারের মতো বাবা, স্বামী ও ছেলে হারানো পরিবারের সদস্যরা।

সভায় স্বামী হারানো হালিমা আক্তার শিলা নামের এক নারী বলেন, যারা রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেসব পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। পুলিশের নিয়োগের সময় যেন তাদের ছেলে-মেয়েদের অগ্রাধিকার পায় সেই কামনা করি। এসব পরিবারের জন্য যেন কিছু করা যায় সেদিকে নজর দিতে পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করছি।  

এ সময় নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের এবং সন্তানদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।  

দাবিগুলো মধ্যে ছিল - প্রত্যেক মৃত্যুবরণকারী পুলিশ পরিবারের সন্তানদের সুযোগ-সুবিধা ও রেশনের ব্যবস্থা, চাকরির সুযোগ করে দেওয়া।

অনুষ্ঠানে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান সভাপতিত্ব করেন।  

সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, যখন একজন পুলিশ দায়িত্বে থাকে তখন তিনি নিজের জীবনকে না ভেবে একটি চিন্তা করেন, কিভাবে মানুষের জীবন বাঁচানো যায়।

তিনি আরও বলেন, সময়ের পরিক্রমায় পুলিশ বাহিনী আজ উন্নত, চিন্তা ও কল্যাণমূলক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পুলিশ বাহিনীর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এবং আইজিপি মহোদয় মৃত্যুবরণকারী পুলিশের অসহায় পরিবারের সকল সমস্যা নিরসনে কাজ করছেন। আমিও সবসময় চেষ্টা করব আপনাদের পাশে থাকার।

সভায় মুক্তিযুদ্ধকালীন শহীদ ও দায়িত্ব পালনের সময় দেশ-বিদেশে নিহত সব পুলিশ সদস্যের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এ পুলিশ সুপার।  

এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হাইওয়ে মাদারীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মো. আবদুল্লাহ বিন কালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার।

এছাড়াও এসময় অন্যদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল, সহকারী পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মো. মেহেদী হাসান শাতিল, সহকারী পুলিশ সুপার মো. নূরে আল মাহমুদ, টিআই (প্রশাসন) তুহিন লস্করসহ জেলায় কর্মরত পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজিপির পক্ষ থেকে ফরিদপুর জেলার ৪৪ জন কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের মাঝে উপহার সামগ্রী ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

এর আগে সকাল ১১ টার দিকে পুলিশ লাইন্সের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালনসহ নিহত পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।