ঢাকা: ভূমির ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে বড় উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল ম্যাপ ও তথ্যে প্রকৃত মালিক, জমির সীমানা নির্ধারণসহ যাবতীয় তথ্যের কথা বলা হয়েছে।
‘ভূমি ব্যবস্থাপনায় সাম্প্রতিক উদ্যোগ ও নাগরিক অধিকার’ শীর্ষক সংলাপে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক এসব কথা বলেন। এসডিজি বাস্তবায়ন নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি সম্পর্কিত যে সব সমস্যা রয়েছে, তার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব হবে না। তবে আমরা জনগণের ভোগান্তি দূর করার জন্য যতদূর সম্ভব সেটা করেছি। এবং টেকসই উন্নয়নকে সামনে রেখে করেছি। যাতে আগামীতে অন্য সরকার দায়িত্বে এলে তাদের নতুন করে শুরু না করতে হয়। ভূমি সম্পর্কিত সকল সমস্যার সমাধান পাবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত কর্মকর্তাদের কাজকে জবাবদিহির অধীনে আনা হয়েছে, যাতে কোনো মানুষ সেবা নিতে এসে দিনের পর দিন না ঘোরেন, হয়রানির শিকার না হন এবং অর্থ ব্যয় না করতে হয়। এ জন্য সেবাপ্রার্থীকেও সচেতন হতে হবে।
মানুষ শতভাগ সচেতন না, প্রযুক্তির ব্যবহারও সবাই করতে পারে না। আর ভূমি অফিসগুলোর কাছে তথ্য জানতে গেলে সহযোগিতা করে না—এমন অভিযোগ আছে। দেশে ইন্টারনেটের গতিও কম, দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। এ অবস্থায় সেবা পাওয়া সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্বের সব মানুষ জমি সম্পর্কিত কাজে অভিজ্ঞ না। মধ্যবর্তী একটি শ্রেণি আছে, যারা এ কাজগুলো করে থাকে। আমরাও চিন্তা করেছি এ সম্পর্কিত কাজের জন্য একটি পেশাজীবী গড়ে উঠবে, যারা কম্পিউটার-নেট নিয়ে কাজ করবে। তারা একটি মিনিমাম চার্জের বিনিময়ে সেবা দেবে। তবে গ্রাহকের কোনো সমস্যা করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
ভূমি সচিব মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পূরাতন জমি ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে মামলা হচ্ছে এবং যুগ যুগ ধরে চলছে। কিন্তু ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা-ম্যাপ ও খতিয়ান তৈরি হলে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। জমির ডিজিটাল ম্যাপ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট জমির সীমানা, পরিমাণ, চৌহদ্দি এবং ওই জমির অতীত-বর্তমান সকল তথ্য থাকে। ওই জমিতে কী ঘর আছে, ম্যাপে সেটাও দেখা যাবে।
জমির যে নকশা করা হয়েছে, তা ভুল হওয়ার পরিমাণ মিলিমিটার পর্যন্ত। যাতে ভুল না হয় এ জন্য জমির মালিকের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষাও করা হয়েছে, যেখানে ভুক্তিভোগী শতভাগ সন্তুষ্ট।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে পেছনের মানুষগুলো কতটা সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে; উদ্যোগ নিলেই হবে না। ডিজিটাইজেশন করতে উদ্যোগুলো বাস্তবায়নে মানুষও তৈরি করতে হবে—এমন মন্তেব্যের জবাবে ভূমি সচিব বলে, পেছনের মানুষগুলোকে রাতারাতি পরিবর্তন করার ম্যাজিক আমাদের হাতে নেই। এ জন্য আমরা সিসটেমগুলো সেইভাবে তৈরি করেছি, যাতে কোনো মানুষ ইচ্ছা করলেও সিসটেমের কারণে খারাপ কিছু করতে না পারে।
অনুষ্ঠান বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভূমি সম্পর্কিত নানা ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তারা ভূমিতে নারীর অভিগম্যতা ও অধিকার সৃষ্টিতে আইনের সংশোধন, ভূমি জটিলতা দূর করতে সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সংলাপে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, ভূমি মামলার অভিজ্ঞ আইনজীবী, ভুক্তভোগী নাগরিক, বিভিন্ন সংগঠকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ উপস্থিত থেকে মতামত দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ