ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, (ইবি): দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী বেগমকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী ও তার সহযোগীদের এবার বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তাদের সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কার শিক্ষার্থীরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের একই সেশনের মুয়াবিয়া জাহান। এর মধ্যে সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অন্যরা ছাত্রলীগের কর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদাত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে তার দপ্তরে শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে শোকজ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের জবাব দিতে হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তারা চূড়ান্ত বহিষ্কৃত হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাবনা ও কুষ্টিয়া পুলিশের নিরাপত্তায় বাবা আতাউর রহমানের সঙ্গে ইবি ক্যাম্পাসে আসেন ফুলপরী বেগম। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল বাদ দিয়ে নতুন হিসেবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, পাবনা ও কুষ্টিয়া পুলিশের মাধ্যমে ফুলপরীকে নিরাপত্তা দিয়ে ক্যাম্পাসে আনা হয়েছে। সঙ্গে ছিলেন সহকারী প্রক্টর মাহাবুব আলম। ক্যাম্পাসে এসে তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকতে ইচ্ছা পোষণ করেন। আমরা ছাত্র উপদেষ্টার মাধ্যমে কথা বলেছি এবং তার পছন্দের হলে সিট বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
এর আগে বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৫ জনকে সব ধরনের শিক্ষাকার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী যে হলে থাকতে ইচ্ছুক, সে হলেই তাকে আবাসিকতা দিতে নির্দেশ দেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় ফুলপরীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ও মোয়াবিয়া, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ এবং হাইকোর্ট কর্তৃক পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টেও রিট হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় প্রতিটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফুলপরীকে নির্যাতনের সত্যতা প্রমাণিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৩
এমজে