ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুই সুদখোরের আলিশান বাড়িতে পুলিশের অভিযান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
দুই সুদখোরের আলিশান বাড়িতে পুলিশের অভিযান

মেহেরপুর: গাংনী উপজেলা শহরের দুই সুদ কারবারির ৬ তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়িতে দেড় ঘণ্টা ব্যাপী অভিযান চালিয়েছে থানা পুলিশ।

অভিযানে ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণে ব্ল্যাংক চেক, স্টাম্প ও ৫টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

অভিযান শেষে সুদ কারবারি আবু হানিফ (৪২) ও আনারুল ইসলামকে(৫৫) গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় অপর এক সুদ কারবারি পালিয়ে যায়।  

শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৮ টা থেকে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত শহরের উত্তরপাড়া এলাকার এই অভিযান চালায় গাংনী থানা পুলিশ।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে তদন্ত অফিসার মনোজিৎ কুমার নন্দী, উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান, এসআই আতিকুর রহমান, এসআই আশিকুজ্জামানসহ পুলিশের একটি টিম অংশ নেয় অভিযানে।

সুদ কারবারি আনারুল ইসলাম গাংনী শহরের উত্তরপাড়া এলাকার মৃত ইউনুস আলীর ছেলে ও আবু হানিফ একই পাড়ার ছমিরুদ্দীনের ছেলে।  

পুলিশ জানিয়েছে, আবু হানিফের ৬ তলা বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় ব্যাগ ভর্তি বিভিন্ন ব্যাংকের স্বাক্ষরিত ৩০২ টি ব্লাঙ্ক চেক, ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষরিত ৩০০ টাকা মূল্যের ১৪০ জোড়া নন জুডিসিয়াল (ব্ল্যাংঙ্ক) স্ট্যাম্প, সুদ কারবারের ১৩টি টালি খাতা, বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্ট মামলার ৫টি নথি, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়া বিভিন্ন মডেলের ৫ টি মোটরসাইকেল ও একটি স্বর্ণের চেইন জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার শত শত লোকজন ওই সুদ কারবারির ৬ তলা প্রাসাদের সামনে এসে হাজির হন। এসময় তারা গ্রেফতারদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।  

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হানিফ ও আনারুল ইসলাম গাংনী উপজেলা শহরের কুখ্যাত সুদ কারবারি। তাদের বিরুদ্ধে সুদের টাকা আদায় করার জন্য বিভিন্ন অপর্কম ও অনৈতিকতার অভিযোগ আছে। ভুক্তভোগীদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মামলা, হামলা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এ দুই সুদখোরের বিরুদ্ধে। এছাড়াও অর্থ আদায়ের জন্য দামি জিনিসপত্র জোর করে তুলে আনতেন তারা। সুদ কারবারে তারা বর্গিদের সেই ইতিহাসকেও হার মানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, আবু হানিফ ও তার সুদ ব্যবসার অপর পার্টনার আনারুল ইসলামকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন। রোববার (১২ মার্চ) তাদের দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষকে সাদা স্ট্যাম্প ও ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে চড়া সুদে টাকা ধার দিয়ে আসছিলেন আবু হানিফ ও আনারুল ইসলাম। তাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে না পারলে, সেই চেকে ইচ্ছে মতো টাকার অংক বসিয়ে এবং সাদ স্ট্যাম্পে ইচ্ছেমত লিখে আদালতে মামলা দিয়ে জেল খাটাতো এই অবৈধ সুদের ব্যবসায়ীরা। তাদের অত্যাচারে নিঃস্ব হয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন। অনেকের শেষ সম্বল ভিটেমাটিও লিখে নিয়েছেন তারা।  

এসব অভিযোগে এর আগে গত শুক্রবার রাতে গাংনী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম আবু হানিফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মনিরুল ইসরাম বলেন, আমি আবু হানিফের কাছ থেকে সুদের ওপর এক লাখ টাকা নিয়েছিলাম। সুদআসলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পরেও আমার ছেলের একটি সুজুকি ব্র্যান্ডের মোটরাসাইকেল কেড়ে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে তারা। আমি থানায় অভিযোগ করায় শনিবার সকাল থেকে আমাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন আবু হানিফ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আবু হানিফ ও তার ভাই আনিছুর রহমান এবং আনারুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ বাজারে প্রকাশ্যে সুদের কারবার করে আসছেন।  

জানা গেছে, বছর দশেক আগে ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে শ্রম দিয়ে জীবন নির্বাহ করতেন আবু হানিফ। আর তার বড় ভাই আনিছুর রহমান ছিলেন কৃষক। একদিন তারা সুদের ব্যবসা শুরু করে। খুব কম সময়ে অঢেল টাকার মালিক বনে যান। মেহেরপুর—কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উত্তরপাড়া এলাকায় তারা গড়ে তুলেছেন ৬তলা বিশিষ্ট আলিশান এক প্রাসাদ। এছাড়াও কুষ্টিয়া শহরে ও রাজধানী ঢাকা শহরেও রয়েছে তাদের কোটি কোটি টাকা দামের একাধিক ফ্লাট। তাদের সুদ ব্যবসার অপর পার্টনার আনারুল ইসলামেরও পল্লী বিদ্যুৎ পাড়া এলাকায় একই মডেলের ৬ তলা বিশিষ্ট আলিশান প্রাসাদ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।