ঢাকা: এবারের রোজায় দেশে অনেক বেশি খাদ্য ও নিত্য পণ্যের মজুদ আছে। তাই জনগণকে অহেতুক উদ্বিগ্ন হয়ে একসঙ্গে অনেক বেশি পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
রোজায় মানুষের কষ্ট লাগবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে রোববার (১২ মার্চ) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ আহ্বান জানান।
মুখ্য সচিব বলেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারের রোজায় অনেক বেশি খাদ্য-শস্য ও নিত্য পণ্যের মজুদ আছে। তাই অহেতুক উদ্বিগ্ন হয়ে একসঙ্গে অনেক বেশি পণ্য না কিনতে তিনি জনসাধারণকে অনুরোধ করেন।
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, রোজার প্রস্তুতি আমরা যথাযথভাবে নিতে পেরেছি। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য-শস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজারে আছে। আমরা শুধু সবাইকে বলবো ‘প্যানিক বায়িং’ যেন কেউ না করে। একবারে অনেক জিনিস যাতে কেউ না ক্রয় করে। অর্থাৎ, যখন যার যা প্রয়োজন তা নিলে কারও কোনো সমস্যা হবে না। আমরা খুব ভালোভাবে রোজা ও ঈদ উদযাপন করতে পারবো।
তিনি বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য পেয়েছি বিগত যেকোনো বছরের চেয়ে এ বছর সরকারের যে খাদ্য মজুদ তার পরিমাণ অনেক বেশি। অর্থাৎ রোজায় আমাদের অনেক বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় স্বস্তির বিষয় এবং এ মজুদ বিগত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি।
অবৈধ মজুদ ও বাজারে সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মুখ্য সচিব। তিনি বলেন, যারা রোজার সময় মজুদ করার চেষ্টা করবে, মানুষের দুর্ভোগ করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যাতে মজুদ করতে না পারে কড়া নজরদারি থাকবে। রোজায় পণ্য মূল্য বাড়বে না এর কোনো কারণ নাই। মজুদ আমাদের যথেষ্ট আছে। বিগত রোজার চেয়ে বেশি আছে।
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আরও বলেন, চিনি-তেলের ওপর ডিউটি কমানো হয়েছে। এ পণ্যগুলো আমাদের বাজারে ঢুকে গেছে। সরকারও যথেষ্ট পরিমাণ নিত্য পণ্য সরবরাহ করেছে। আমরা মোবাইল কোর্ট চালু রাখবো। মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছি। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যাতে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয় সেজন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মুখ্য সচিব।
সরবরাহ ঠিক রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রোজার সময় নিত্য পণ্য যাতে মানুষের কাছে পৌঁছায়, সাপ্লাই চেইন যাতে ঠিক থাকে সে জন্য আমরা সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি। কম আয়ের মানুষের জন্য সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি নিয়েছে। ওএমএস, টিসিবি আছে; রোজা ও ঈদকে ঘিরে দুই কিস্তিতে এবার খাদ্য পণ্য সরবরাহ হবে। তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, ও খেজুর- প্রতিটি নিত্য পণ্য আমরা দুবার করে এক কোটি মানুষকে দেব। সে হিসেবে প্রতিবারে ৫ কোটি লোক উপকৃত হবে। অর্থাৎ দুইবারে ১০ কোটি মানুষ টিসিবির খাদ্য পণ্য সহজে কিনতে পারবে।
আমরা খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকা হিসেবে ৩৫ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি। সমগ্র দেশে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আমাদের খাদ্যশস্য সরবরাহ অনেকগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। সেহরি ও ইফতারির সময় যাতে কোনো ব্যাঘাত যাতে না ঘটে সে জন্য আমরা বলে দিয়েছি। পানি সরবরাহের বিষয়টিও দেখেছি।
দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঈদ-উল-ফিতরে মানুষের ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত ও স্বাচ্ছন্দময় করার বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয় এ বৈঠকে।
বৈঠকে রমজানকে ঘিরে নিত্য পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ মহানগরীসমূহের যানজট নিরসন, সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, বিশেষ করে বাস-রেল-লঞ্চ টার্মিনালগুলোয় বাড়তি নিরাপত্তা, ইফতার-তারাবি ও সেহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ, বাস-ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি বন্ধ এবং প্রতারণা-ছিনতাইয়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয় এবং সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া যোগাযোগে রেলের শিডিউল বিপর্যয়, টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, সহজে টিকিট প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, মহাসড়কের শৃঙ্খলা, ঈদের আগে রাস্তা ও সেতু সংস্কার, নৌ-পথে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ঠেকানো, আকাশপথে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো, গার্মেন্টস ও পাটকল শ্রমিকদের বেতনের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সমন্বয় ও সংস্কার), সেতু বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, ধর্ম মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া খাদ্য অধিদপ্তর, বিএসটিআই, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ব্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, বিআরটিসি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
এমইউএম/এমজে