ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: সম্রাটের মৃত্যুর সনদ পেতে স্ত্রীর দৌড়ঝাঁপ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: সম্রাটের মৃত্যুর সনদ পেতে স্ত্রীর দৌড়ঝাঁপ স্বামী সম্রাটের সঙ্গে এই ছবি এখন শুধুই স্মৃতি রিয়ার

ঢাকা: রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় স্বামীর মৃত্যু সনদের জন্য বিভিন্ন দফতরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নিহত সম্রাট হোসেনের (৩৫) স্ত্রী এলমা আক্তার রিয়া। রোববার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত্যুসনদের জন্য যান তিনি।

জরুরি বিভাগসহ সবখানেই যোগাযোগ করেন।

এসময় এলমা আক্তার জানান, সম্রাটের বাবা মৃত আশরাফ উদ্দিন গামা। বংশালের ২৫ নম্বর মালিটোলায় তাদের নিজেদের বাড়ি। পাশেই ২৭ নম্বর বাড়ি এলমাদের। দুই সন্তানের জনক সম্রাট। ছেলে সারাফ (৫) ও ৪ মাসের মেয়ে সারা। সিদ্দিকবাজারে আনিকা এজেন্সি (সেনেটারির দোকান) নামে চাচাতো ভাই মোমিন উদ্দিন সুমেনের দোকানটিতে ৮ বছর যাবৎ কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন সম্রাট। বেতন পেতেন ২০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে কাজে যান সম্রাট। বিকেলে তাদেরই এক আত্মীয় এলমাকে ফোন দিয়ে জানান, সিদ্দিকবাজারে এসি বিস্ফোরণ হয়েছে। অনেক মানুষ আহত ও মারা গেছে। খবর শুনে তিনি দৌড়ে সম্রাটের দোকানে ছুটে যান। তবে ধ্বংসযজ্ঞ দেখে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারেননি।

এলমা বলেন, সিদ্দিকবাজারে ওনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। যখন শুনলাম সবাইকে ঢামেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে; তখন সেখানে গেলাম। ঢামেকের প্রতিটা রুমে রুমে খুঁজেছি। চার থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা খোঁজার পর জরুরি বিভাগের ৪ নম্বর রুমে সম্রাটকে দেখতে পাই। ওর অবস্থা তখন খুব খারাপ ছিল। ডাক্তাররা বলছিলেন ইসিজি করে দেখতে হবে। এরপর ৩ নম্বর রুমে ইসিজি করেন। কিন্তু আমাকে আর ওর সঙ্গে কেউ থাকতে দেয়নি। আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে সম্রাটের মরদেহও বাসায় নিয়ে আসে স্বজনরা। এরপর ভোর রাতেই আজিমপুর কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। ওই রাতে মরদেহ কীভাবে বাসায় আসা হয়েছিল তার কিছুই তিনি জানেন না। শুনেছেন, সম্রাটের বন্ধুরাই তার মরদেহ হাসপাতাল থেকে জোর নিয়ে গিয়েছিল।

ঘটনার প্রায় ১ সপ্তাহ পর হঠাৎ কেনো তিনি মৃত্যু সনদের জন্য হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে এলমা বলেন, আমার দুইটা সন্তান। ওদের দাদা-দাদী কেউ নেই। বাড়িটিও সম্রাটের চাচা আর বাবার নামে। বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণেই এখন দৌড়ঝাঁপ করছি। কেউ আমার সঙ্গে নেই। সম্রাটের পরিবারেরও কেউ নেই যে আমাকে সাহায্য করবে। আমি এখন অসহায়। ঘটনার পরদিন থেকেই জেলা প্রশাসনের কার্যালয়, হাসপাতালে একাধিকবার ঘুরছি। কেউ কোনো সুরাহা দিচ্ছেন না।

এই দুর্ঘটনায় সম্রাটের চাচাতো ভাই মোমিন উদ্দিন সুমনও মারা গেছেন। আনিকা এজেন্সির মালিক মোমিনের মরদেহ ঘটনার পরদিন বিকেলে ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ফোনে আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে তাদেরকে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।

গত মঙ্গলবারের (৭ মার্চ) এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩ জন। তবে জেলা প্রশাসকের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে সম্রাটের নাম।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া জানান, সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্যান্যদের মৃত্যুর পাশাপাশি হাসপাতালে সম্রাট নামে এক ব্যক্তি মারা যায়। কিন্তু হাসপাতালের নথিতে তার নাম, ঠিকানা লেখা নেই। কারণ তার মরদেহ সেদিন স্বজনরা জোর করে নিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৩
এজেডএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।