ঢাকা: আইন অনুযায়ী সুলতান’স ডাইনের কোনো ব্যত্যয় পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান।
সোমবার (১৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এই কথা জানান তিনি।
সম্প্রতি সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির পরিবর্তে অন্য প্রাণির মাংস দেওয়ার বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের তদন্তের বিষয়ে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, সুলতান’স ডাইনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে আমরা (জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর) মতামত দিতে পারি না। কারণ, আমাদের কাছে ওই রেস্তোরাঁর মাংসের স্যাম্পল নেই। আর মাংস পরীক্ষা করার ব্যবস্থাও আমাদের নেই। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এটি পরীক্ষা করছে, তারা এই তথ্য দিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রেস্তোরাঁটিতে অভিযান চালিয়েছি। সেই প্রেক্ষিতে আজকে শুনানি করা হয়েছে। এতে ভোক্তা আইন অনুযায়ী কোনো ব্যত্যয় পায়নি সুলতান’স ডাইনের।
তবে কয়দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাচ্চিতে খাসির পরিবর্তে অন্য মাংস দেওয়া অভিযোগ ওঠায় সুলতান'স ডাইন পক্ষ সতর্ক হয়ে গেছে, এমনটাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভোক্তার ডিজি।
সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা আগামী সপ্তাহে সুলতান’স ডাইন, কাচ্চি ভাই, নবাবী ভোজের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিটিং করব। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এসব সনামধন্য প্রতিষ্ঠান যাতে তাদের মাংসের রেকর্ড রাখেন। অর্থাৎ, তারা যেসব ভেন্ডর থেকে মাংসগুলো সংগ্রহ করেছে, সেটা যেনো হালাল পদ্ধতিতে সংগ্রহ করেন এবং কতটুকু মাংস কিনেছেন সেটির তথ্য রাখেন। এটা আগামী সপ্তাহে তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে কাচ্চিতে খাসির পরিবর্তে অন্য প্রাণির মাংস ব্যবহারের অভিযোগ থেকে সুলতান’স ডাইনকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সোমবার (১৩ মার্চ) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল স্বাক্ষরিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাসি বাদে অন্য প্রাণির মাংসের ব্যবহার নিঃসন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইনের ওপর আরোপিত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া যে মোবাইল ফোন নম্বর থেকে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিলো, তা বন্ধ পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানায়, সন্দেহযুক্ত চিকন হাড়ের ব্যাপারে সুলতান'স ডাইনের কর্তৃপক্ষের দাবি, ৭ থেকে ৯ কেজি ওজনের খাসির মাংস তারা ব্যবহার করেন এবং আকারে ছোট হওয়ায় এ সকল খাসির হাড় চিকন হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির পরিবর্তে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়টি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দৃষ্টি গোচর হয়। সেই প্রেক্ষিতে গত ৯ মার্চ বিকাল পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের গুলশান-২ শাখা সরেজমিনে তদন্ত করা হয়। আজ সোমবার (১৩ মার্চ) অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জিএম, এজিএম এবং ওই শাখার ম্যানেজার শুনানিতে উপস্থিত হয়ে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য দেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরেজমিনে তদন্ত এবং অভিযুক্তের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, কাপ্তান বাজারের মা বাবার দোয়া গোস্ত বিতান নামক ভেন্ডরের মাধ্যমে খাসির মাংস সংগ্রহ করে অভিযুক্ত সুলতানস ডাইন। খাসি জবাই করার সময় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মাঝেমধ্যে সেখানে উপস্থিত থাকেন। কাটার পর ভেন্ডর নিজ দায়িত্বে মাংস প্রতিষ্ঠানে পৌঁছায়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ৯ মার্চ অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মৌখিক ভাবে ১৫০ কেজি খাসির মাংস সংগ্রহের কথা জানান। কিন্তু ভেন্ডর ১২৫ কেজি সরবরাহের কথা জানান।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সুলতান'স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির পরিবর্তে অন্য প্রাণির মাংস ব্যবহারের অভিযোগ করেন এক ভোক্তা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম ব্যাপক ভাইরাল হয়।
পরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সুলতান'স ডাইনের গুলশান-২ শাখায় অভিযান চালায়। অভিযানে সুলতান'স ডাইনের ওই শাখার রান্না করা মাংসের ওজনের সঙ্গে ভেন্ডরের দেওয়া মাংসের তথ্যের গড়মিল পাওয়া যায়। এজন্য সুলতানস ডাইনের ওই শাখাকে শুনানির জন্য ডাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেই শুনানির প্রেক্ষিতেই আজ এই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩
এসসি/এসএএইচ