ঢাকা: রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্যাফে কুইন স্যানিটারি মার্কেটের বিধ্বস্ত হওয়া ভবনের সামনের সড়ক খুলে দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পর রাস্তাটি খুলে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, সিদ্দিকবাজারে ভবন বিধ্বস্ত হওয়ায় পর থেকে সদরঘাট থেকে গুলিস্তান যাতায়াতের প্রধান সড়ক সকাল থেকে হালকা যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ভবনের সামনের ১৮ ফিট জায়গা ব্যারিকেড দিয়ে বাকি অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যানজট ও জনভোগান্তি কমেছে।
গত সাত দিন আলুবাজার মোড় থেকে গাড়ির ডাইভারশন করায় বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার হয়ে কদমতলী মোড়, গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার, স্টেডিয়াম, জিরো পয়েন্ট, পুরানা পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর পর্যন্ত এসব এলাকায় তীব্র যানজট ছিল। রাস্তা খুলে দেওয়ায় আজ আর সে যানজট দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে বংশাল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) শিশির কুমার কর্মকার বাংলানিউজকে বলেন, যানজট ও জনভোগান্তি কমাতে আজ সকাল থেকে রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। বিধ্বস্ত ভবনের সামনে ১৮ ফুট বাদ দিয়ে আমরা ব্যারিকেড দিয়েছি। তারপরের অংশ থেকে হালকা যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভবনে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ১৮টি স্টিলের পাইপ বসানো হয়েছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেজন্য আমরা সার্বক্ষণিক পাহারায় আছি। ক্ষতিগ্রস্ত দুইটি ভবন বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েকটি মার্কেটের নিচের দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে সংস্কার কাজ করছেন রাজউকের নির্মাণ মিস্ত্রি রিয়াজ হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আজকেই আমরা ভবনের ৯টি পিলারের সাপোর্ট দেওয়ার কাজ শেষ করলাম। ৯টি পিলারে ১৮টি স্টিলের পাইপ দিয়ে সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পিলারে দুইটি পাইপ দেওয়া হয়েছে। গত তিন দিনে আমরা এ কাজ শেষ করেছি।
এ বিষয়ে সদরঘাট থেকে গুলিস্তানে আসা আল-আমিন বাংলানিউজকে জানান, আজ কোনো যানজট নেই। অল্প সময়েই চলে এসেছি। গত কয়েকদিন অসহনীয় যানজট ছিল। এ কয়দিন প্রায়ই হেঁটে যাতায়াত করেছি।
আকাশ পরিবহনের হেলপার রকিবুল বাংলানিউজকে বলেন, আজ সকাল থেকে রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। কোনো জ্যাম পাইনি। একটানে গুলিস্তান চলে এসেছি।
এদিকে, সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজউক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সিদ্দিক বাজারের সামনের সম্পূর্ণ সড়ক খুলে দেওয়া সম্ভব নয়— মোবাইলফোনে এমন তথ্য জানিয়েছেন রাজউকের তদন্ত কমিটির প্রধান প্রকৌশলী সামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত কিনা— এ বিষয়ে জানতে অন্তত ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন। তাই আপাতত ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভবনটির সামনের সড়কের বিপরীত লেন দিয়ে হালকা যানবাহন চলতে দেওয়া হবে। বন্ধ থাকবে ভবনের সামনের লেন। ভারী যান চলতে দেওয়া হবে না। কারণ, এতে বেশি কম্পন হয়ে আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়তে পারে ভবনটি। ’
এছাড়া তদন্ত কমিটি পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে বলেও জানান তিনি। সুপারিশ গুলো হলো-
১. ভবনটিতে প্রপিং (Propping) করতে হবে। এর যে কলামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রপিং করা। এটি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।
২. ভবনটির সামনের সড়কের ২৫/২৬ ফিট বাদ দিয়ে একাংশ দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে। তবে, রাতে রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। বিপরীত লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। ভারী কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
৩. ৪৫ দিনের মধ্যে মালিকপক্ষকে বিশেষজ্ঞ কোনো থার্ড পার্টি দিয়ে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ) করতে হবে। থার্ড পার্টির ডিইএ রিপোর্টে যে ডিজাইন আসবে সেই ডিজাইন অনুযায়ী রেট্রোফিটিংয়ের কাজ করতে হবে ১৮০ দিনের মধ্যে।
৪. ডিইএ ও রেট্রোফিটিং— এ দুই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভবনটি বসবাস বা ব্যবহারের উপযোগী হবে না।
৫. সুপারিশের ভিত্তিতে কাজগুলো শেষ করা গেলে আমরা একটা সার্টিফিকেট দেব। এটা দেওয়ার পরই কেবল ভবনটি ব্যবহার করা যাবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্যাফে কুইন স্যানিটারি মার্কেট ভবন। ওই ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত ভেতরের অংশের ছাদ ধসে পড়ে, নিচ তলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত দেয়ালও ধসে পড়ে। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভবনটির বেজমেন্ট। ভবনটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হালকা হেলে গেছে। পাশের ব্র্যাক ব্যাংক ভবনের নিচতলার এক পাশের দেয়াল আর দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত সামনের দেয়াল ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
জিসিজি/এসআইএ