ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এলিট ফোর্স র‌্যাবের পথচলার ১৯ বছর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
এলিট ফোর্স র‌্যাবের পথচলার ১৯ বছর

ঢাকা: দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে গঠিত এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে রোববার (১৯ মার্চ)।  

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত এ বাহিনী ২০০৪ সালে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।

এরপর থেকে প্রতিবছর ২৬ মার্চ দিনটিকে ‘রাইজিং ডে’ হিসেবে পালন করে আসছে বাহিনীটি।

এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রোববার অনুষ্ঠানের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান ও র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত থাকবেন।

প্রতিষ্ঠার পর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও স্ব স্ব এলাকায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করে র‌্যাব। প্রায় তিন সপ্তাহ পর ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) রমনা বটমূলে নিরাপত্তা দিয়ে র‌্যাব তাদের কার্যক্রম শুরু করে। একই বছরের ২১ জুন পূর্ণাঙ্গভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু বাহিনীটি।

পথচলার এ ১৯ বছরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে র‌্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। বর্তমানে সারাদেশে এ এলিট ফোর্সের ব্যাটালিয়ন সংখ্যা ১৫টি। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জীবনবাজি রেখে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে সংস্থাটি। র‌্যাব দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ টানা ৩৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আমির শায়খ আব্দুর রহমানকে সিলেটের শাপলাবাগ থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। প্রতিষ্ঠার পর এটিই ছিল র‌্যাবের সবচেয়ে আলোচিত অভিযান ও সবচেয়ে বড় সাফল্য।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তাদের শক্তি জানান দেওয়ার পরপরই মাঠে নামে র‌্যাবের গোয়েন্দারা। এরপর গ্রেফতার করা হয় সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানিসহ শত শত জঙ্গিকে।  

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর র‌্যাব অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর তিন শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।  

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে র‍্যাব মোট অপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করে ২৮ হাজার ৩৮৩ জনকে। এক বছরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১২৪টি অভিযানে ১৮৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে।  

এছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার গ্রেফতার ৬৮ সদস্য ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ১৭ জন গ্রেফতার।  

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬ জন বিভিন্ন অপরাধী ও সন্ত্রাসীকে। শুরু থেকেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকবিরোধী অভিযান, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে বাহিনীটি। এছাড়া বিশেষ দিনগুলোতেও তাদের নিরাপত্তা দিতে দেখা যায়।  

প্রতিষ্ঠার পর থেকে র‌্যাবের কাছে জঙ্গি ও জলদস্যু মিলিয়ে মোট ৪২১ জন অপরাধী আত্মসমর্পণ করে। তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। র‌্যাব নিজস্ব অর্থায়নে তাদের পুনর্বাসন ভূমিকা রেখেছে।

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনো অভিযানে বড় বড় রাঘব বোয়ালদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনে বাহিনীটি। যাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ কোটি কোটি টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মাদক, অস্ত্র ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম।

‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’ মোবাইল অ্যাপস সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসী তথ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধ, নিখোঁজ ব্যক্তির তথ্য, খুন, অপহরণ, মাদক, ডাকাতির বিষয়ে যে কেউ সহজে জানাতে পারে।

র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা নিয়ে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলছে র‌্যাব ফোর্সেস। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশপ্রেমে বলিয়ান হয়ে পেশাদারিত্ব, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকবিরোধী অভিযান, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, যা সাধারণ জনগণের আস্থার জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।