ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অনুমতি স্থগিতের মধ্যেই চলছিলো ইমাদের বাসটি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অনুমতি স্থগিতের মধ্যেই চলছিলো ইমাদের বাসটি

ঢাকা: মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় পড়া ইমাদ পরিবহনের চলাচলের অনুমতি স্থগিত ছিলো। বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ গত ১৮ জানুয়ারি পেরিয়ে গেছে।

 

অনুমতি স্থগিত থাকা এই বাসই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এখন পর্যন্ত ১৯ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটিয়েছে। আহত আরও ৩০ জনের বেশি।  

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র বলছে, চার বছর আগে বাসটি গোপালগঞ্জে দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হলে চলাচলের অনুমতি স্থগিত রাখা হয়েছিল।  

এ বাসটির ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে খুলনা পর্যন্ত চলাচলের জন্য অনুমতি (রুট পারমিট) নেওয়া হয়েছিল। বাসটি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পান্থপথ শাখা ও ইমাদ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির যৌথ নামে কেনা। কোম্পানির মালিক হাবিবুর রহমান শেখ। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের আলিয়া মাদ্রাসা রোডের হারুন টাওয়ারে।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই বাসটি আগেও দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। যার জন্য তাদের চলাচলের অনুমতি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এরপরও চলাচল করা মহা অন্যায়।  

এখন এই বাাসের নিবন্ধন বাতিল ও মালিকের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

অন্যদিকে বিআরটিএর মনিটরিংয়ের অভাবকেই দায়ী করছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন, যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিশেষজ্ঞরা।

আর বিআরটিএর জনবলের অভাবের কারণেই সঠিক ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বিআরটিএর এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিআরটিএর লোকবল ব্যবস্থা এতো নেই। যে সব সময় মনিটারিং করা যায়। এখন রোডে পুলিশ থাকে। তারা যদি দেখতো বাসটি সড়কে চলার অনুমতি নেই। তাহলে তো এই বাস সড়কে চলতে পারতো না।  

এ বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক বলেন, মানুষ সুযোগ সন্ধানী হয়ে থাকে। সবাই চায় সুযোগ সন্ধানী হতে। এখন ধরার কেউ নেই, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো যায়। সেজন্য চালকরা ইচ্ছেমতো গাতি বাড়িয়ে দেয় হাইওয়ে রোডে চলাচলের সময়। যার জন্য সড়কে প্রায়ই এইরকম দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় যেমন চালক দায় একই ভাবে যাদের মাধ্যমে চালানোর সুযোগ পায় তারাও সমান ভাবে এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।  

তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে চালকরা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়। এখন হাইওয়ে রোডের পুলিশ এতো দিনে অনেক অভিজ্ঞ হয়ে গেছে। তারা যদি সেময়গুলোতে এনফোর্সমেন্ট না বাড়ায় তাহলে এই রকম দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। যদি মনিটরিং করা হয় তবেই প্রতিযোগিতার মনোভাব কমে কমার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনাও কমবে।  

এই রোডে চলাচল করা এক যাত্রী শাকিল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পরে বাসগুলো গতি বাড়িয়ে পাল্লাপালী (ওভারটেক) করে। যার জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটলে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা শুনিনি।  

সরকারের উচিত ভালোভাবে মনিটারিং করা উচিত মন্তব্য করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, হাইওয়ে সড়কে যে বাসগুলো চলাচল করে তার মধ্যে অনেক গাড়ির ফিটনেস নেই। আবার হাইওয়ে রোডে যে গতি নির্ধারণ করে সেগুলো চালকরা কোনোভাবে মানে না।  

‘আর বাস মালিকরাও মনে করে বাস রোডে নামালাম মানে কাজ শেষ আর কোনো কাজ নেই। কিন্তু এই বাসের সঙ্গে যে কতোগুলো মানুষের জীবন জড়িত সেগুলোর বিষয় তাদের মাথাব্যাথা নেই। ’ যোগ করেন তিনি।  
 
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, সরকারি সংস্থাগুলোর গাফিলতির জন্য এই রকম দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের কোনো মনিটারিং নেই সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য। যার জন্য প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০২, মার্চ ১৯, ২০২৩
এনবি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।