মাদারীপুর: দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর পর এবার চালু হতে যাচ্ছে এই এলাকার আরেক কাঙ্ক্ষিত রেলসেবা। ইতোপূর্বে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ট্রেনের সঙ্গে খুব বেশি সম্পর্ক ছিল না।
মাদারীপুর জেলার শিবচরের কোল ঘেঁষে লাইন যাবে রাজধানী ঢাকায়। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা রেল পদ্মা সেতু পার হয়ে মাওয়া স্টেশনে যাবে। এই খবর অনেকটাই উচ্ছ্বসিত শিবচরের মানুষ।
স্বল্প খরচে ট্রেনে চড়ে রাজধানী ঢাকা যেতে পারবেন এই আনন্দ স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দা হাসমত মুন্সী বলেন, শুনেছি মঙ্গলবার পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলবে পদ্মা সেতুতে। ট্রেন চালু হলে আমরা অল্প খরচেই ট্রেনে করে ঢাকা যাইতে পারবো। এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উপকারে আসবে এই ট্রেন। '
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাগে ভাগ করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। দিন-রাত দুই শিফটেই চলছে কার্যক্রম। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি ভায়াডাকের ওপর পাথরবিহীন প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার রেল সেতু স্থাপন হচ্ছে মূল সেতুতে।
মঙ্গলবার দুপুরে পরীক্ষামূলকভাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া প্রান্তে যাবে ট্রেন। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভায়াডাক উড়াল রেললাইন চার কিলোমিটার আর মাটির ওপর দিয়ে ২৮ কিলোমিটার। ভায়াডাকের চার কিলোমিটার রেললাইন প্রস্তুত করা হয়েছে পাথরবিহীন। আর ২৮ কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়েছে পাথর দিয়ে।
জাজিরা প্রান্ত থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত তিনটি স্টেশন রয়েছে। শিবচরে ২টি স্টেশন এবং ভাঙ্গায় জংশন রয়েছে। স্টেশনগুলোর ওপর দিয়ে ৩২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গা জংশনটি আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা-পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
শিবচরের পদ্মা সেতু সংলগ্ন কুতুবপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশেই রেল লাইন। পদ্মা সেতু পার হয়েই প্রথম স্টেশন শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় 'পদ্মা স্টেশন'। রেল লাইন ঘিরে এই এলাকার মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। সড়ক পথের পাশাপাশি রেল পথের মাধ্যমেও এই অঞ্চলের মানুষ রাজধানী ঢাকা যেতে পারবে। অন্যদিকে শিবচর থেকে সরাসরি রাজশাহী পর্যন্তও যেতে পারবে ট্রেনে চড়ে। ট্রেন চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় খরচের পরিমাণ কমে যাবে বলে আশা করেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও স্বাচ্ছন্দ্যে যানজট এড়িয়ে রাজধানী পৌঁছাতে পারবে সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা বলেন, শুনছি, শিগগিরই ট্রেন চালু হবে। আগামী জুন নাগাদ ট্রেনে চড়ে রাজধানী যাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ভাড়ার পরিমাণ বাসের চেয়ে কমই থাকবে। এছাড়া ট্রেন জার্নি খুবই আরামদায়ক এবং ঝামেলাহীন। আমরা যোগাযোগের এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।
কলেজ শিক্ষার্থী মামুন বলেন, ঢাকায় প্রবেশ করতে যানজটের কবলে পড়তে হয়। ট্রেন চালু হলে এই ভোগান্তি আর থাকবে না। নিশ্চিন্তে যেকোন স্থানে পৌঁছে যেতে পারবো। পদ্মা সেতুর পর রেল সংযোগ যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরেক দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এতে করে অর্থনৈতিক ভাবেও অগ্রসর হবে এই অঞ্চল!'
ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান জানান, ‘আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ভাঙ্গা স্টেশন থেকে একটি গ্যাংকার ট্রেন এবং ৭ বগিবিশিষ্ট যাত্রীবাহী একটি স্পেশাল ট্রেন মাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রেলমন্ত্রী মহোদয় আসবেন, তিনি এখানে ব্রিফ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ট্রেন ছাড়তে কিছুটা দেরিও হতে পারে। আগে গ্যাংকার ট্রেন ছাড়া হবে, তারপরে স্পেশাল ট্রেন যাত্রা করবে। যাত্রীবাহী হলেও এই স্পেশাল ট্রেনে কোনো যাত্রী থাকবে না। শুধু মন্ত্রী মহোদয়, রেল প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এবং বিশেষ অতিথিবৃন্দ থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেন দুটি মাওয়া স্টেশনে পৌঁছানোর পরে গ্যাংকার ট্রেন ওখানেই থেকে যাবে; আর স্পেশাল ট্রেনটি মাওয়া থেকে ব্যাক করে পুনরায় ভাঙ্গা স্টেশনে আসবে। ’
এদিকে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর- ই- আলম চৌধুরী এমপি মঙ্গলবার দুপুরে ভাঙ্গা স্টেশনে যাবেন। সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছবেন। এবং মাওয়া ক্যাম্পে প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ক আলোচনা সভায় যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২৩
আরএ