ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চাল-বাজার ভবনে ফাটল, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২৩
চাল-বাজার ভবনে ফাটল, দুর্ঘটনার আশঙ্কা এমন ফাটল নিয়েই চলছে চাল-বাজার ভবনের ব্যবসা কার্যক্রম। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরসভার চাল-বাজার ভবনে দেখা দিয়েছে একাধিক ফাটল। ফাটলগুলো বহুদিন ধরে দেখা দিলেও কর্তৃপক্ষের নেই ভবন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ।

জরাজীর্ণ ভবনটি যে কোনো সময় ধসে পড়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় শ্রীমঙ্গল পৌরসভা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণলয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে গেল সাড়ে ৪ বছর ধরে চিঠি চালাচালি হলেও এ নিয়ে কোনো সুরহা হয়নি। তবে যে কোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার চাল-বাজার ভবনের ছাদ, কলাম, বীমসহ বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ছাদের বেশিরভাগ অংশের আস্তরণ খুলে রড বেরিয়ে এসেছে। ছাদ থেকে আস্তরণ খুলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতার মাথায় পড়ে এরইমধ্যে একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বৃষ্টির সময় ছাদে জমে থাকা পানি চুইয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা কিছু সময়ের জন্য দোকান গুটিয়ে রাখতে বাধ্য হন। ভবনটির ছাদের নিচে শতাধিক চাল, ডিম, আলু, চিড়া-মুড়ি ব্যবসায়ীরা ভীতির মধ্যে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ডিম ব্যবসায়ী পরিতোষ দেব বলেন, প্রায় চার দশক আগে নির্মিত এই ভবনটি এখন ভেঙে মানুষের মাথায় পড়ার উপক্রম হয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই! আমরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ব্যবসা করে যাচ্ছি।

আলু ব্যবসায়ী দেলওয়ার হোসেন বলেন, ভাঙা ছাদের নিচে আতংকের মধ্যেই আমরা আছি। যাবার কোনো জায়গাও নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাধ্য হয়ে এখানে ব্যবসা করছি।

চাল বাজার, ডিম বাজার, মুড়ি বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল জলিল ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা করে ভবনটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

চাল বাজারের শাহজালাল ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী হাজী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ভবনজুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির দিনে ছাদ দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ে, আবার ফ্লোরের নিচ থেকেও পানি ওঠে। অনেক জায়গায় বড় বড় ফাটল দেখা যাচ্ছে। ছাদের আস্তরণ খুলে পড়ছে। ভবনটি অনেক পুরোনো। যে কারণে এটি ধসে পড়ে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।  

জরাজীর্ণ এই ভবনটি ভেঙে নতুন করে আধুনিক ভবন নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন জানান তিনি।

পৌরসভা সূত্র জানায়, ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ২০১৮ সালে পৌরসভার মাসিক এক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন বাজার ও পুরোনো বাজারে পৌরসভার নিজস্ব জমিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে নতুন করে ভবন নির্মাণে অনুমোদনের জন্য গত ২০১৮ সালের ১২ মার্চ শ্রীমঙ্গল পৌরসভা থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুর রউফ মিয়া মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র দিয়ে মার্কেট নির্মাণ ও প্রস্তাবিত ভূমির মালিকানা এবং শ্রেণি বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেন।  

নির্দেশনা পেয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক মো. রোকন উদ্দিন ওই বছরের ৬ মে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়ে পৌরসভার নতুন বাজার ও পুরোনো বাজারে পৌরসভার নিজস্ব ভূমিতে দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ ও প্রস্তাবিত ভূমির মালিকানা/শ্রেণীর বিষয়ে তদন্তক্রমে প্রতিবেদন আকারে মতামত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

সূত্র আরও জানায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো চিঠির পর এ পর্যন্ত এ নিয়ে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর গত বছরের ১৯ আগস্ট শ্রীমঙ্গল পৌরসভা থেকে ভূমির তফশীল উল্লেখ করে মার্কেটের সেলামির অর্থ দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করার কথা জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে আবারও চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে পৌরসভার রাজস্ব বৃদ্ধিসহ জানমালের ক্ষতিসাধন থেকে মানুষকে রক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ভবনটি প্রায় চল্লিশ বছর আগে নির্মাণ করা হয়। ভবনটির বর্তমান বেহাল দশায় পৌরসভা কর্তৃক ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বাজার ভবন ভেঙে নতুন করে দ্বিতল আধুনিক ভবন নির্মাণে প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে দুই দফা স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ভবন ভাঙা ও প্রস্তাবিত নতুন ভবন নির্মাণে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি। ভবনের ঝুঁকি বিবেচনায় পদক্ষেপ গ্রহণে সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র কর্তৃক স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে এ বিষয়ে আরও একটি পত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, এ বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। তবে কোনো নির্দেশনা পেলে সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে ভবনের বর্তমান অবস্থা নিরুপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়া মধু বলেন, জরাজীর্ণ ভবনটিতে অনেক ঝুঁকি নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে আসছেন। সেখানকার ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও পৌরসভার আয় বাড়ানোর কথা বিবেচনা করে পৌরসভা কর্তৃক সেখানে আধুনিক দ্বিতল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমরা প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, স্থানীয় সরকার বিভাগ দ্রুত এ বিষযে পদক্ষেপ নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২৩
বিবিবি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।