নাটোর: সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের আমিন উল্লাহ নূরী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন হুশিয়ারী দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মীর হাবিবুল আলম কিছুটা নড়ে চড়ে বসেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের নাটোর ও নওগা অঞ্চলের নির্মাণ কাজ একই সঙ্গে শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে নওগাঁ অঞ্চলের সান্তাহার থেকে আত্রাই উপজেলার শেষ সিমানা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সড়কের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ব্রিজগুলো রং করাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে দিক ও অঞ্চল নির্ণয় সাইন বোর্ডও টানিয়ে দিয়েছে।
অথচ এ সড়কের নাটোর অংশের সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়কের কাজ গত ৫ বছরেও শেষ হয়নি। ফলে নাটোর ও নওগাঁ সড়ক পথে সরাসরি যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে দুটি জেলার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কয়েক দফায় নির্মাণ কাজ শেষ করতে সময় বাড়ানো হলেও নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। এজন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা।
এলাকাবাসী জানান, বর্তমানে কমবেশি ঢাকা থেকে কিংবা দক্ষিণাঞ্চলের পণ্য বা মালবাহি ট্রাক ও দুই-একটি করে বাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেলেও নাটোর অঞ্চলের বীরকুৎসা থেকে নলডাঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা নাজুক হওয়ায় চাহিদা ও সময়মত যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।
এমনকি নাটোর-নওগাঁ জেলায় সরাসরি যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। স্বল্প পরিসরে পণ্যবাহী ট্রাকসহ ছোট ছোট যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। এই সাড়ে ৬ কিলোমিটার ভাঙ্গা রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার ১৫টি উপজেলার মানুষ
তারা আরও জানান, সড়কটি পুরোপুরি চালু না হওয়ায় নাটোর ও নওগাঁ জেলায় সরাসরি চলাচলের একমাত্র যানবাহন হচ্ছে ট্রেন। ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীগামী ২২টি আপ ও ডাউনে আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনে যাতায়াত করেন হাজার হাজার মানুষ।
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৮ সালের শুরুতে নাটোর-নওগাঁ পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৯৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে নাটোর অংশের সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এজন্য নাটোরের মেসার্স মীর হাবিবুল আলম নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল চুক্তিবদ্ধ করা হয়।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হলেও দুই দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। অথচ নওগাঁ জেলার অংশের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে এবং যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর থেকে বীরকুৎটশা পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। তাদের দাবি সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার সঙ্গে ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। পাশাপাশি সময়, জ্বালানী খরচ এবং পরিবহন খরচও কমে যাবে অনেকাংশ।
বীরকুৎসা এলাকাবাসিন্দা আব্দুল জলিল ও ইদ্রিস আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় ছিটে ফোটা করে মাটি ফেলাচ্ছে আর খোয়া বিছিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। ধুলো বালিতে সড়কে চলাচল করা যায় না। একবার সড়ক দিয়ে মাধনগর কিংবা নলডাঙ্গায় যাতায়াত করলে তাকে গোসল না করে থাকা যায় না।
মাধনগর গ্রামের বাসিন্দা, জেহের আলী, সোহেল রানা, জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাধনগর থেকে নলডাঙ্গা ও বীরকুৎসা পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা এতটাই নাজুক অবস্থা। যানবাহন নিয়ে চলাচল খুব কষ্টকর হয়েছে। ফলে অনেক সময় মাধনগর এলাকার মানুষ পার্শ্ববর্তী ব্রক্ষ্মপুর হয়ে ঘুরে নলডাঙ্গাসহ নাটোরে যাতায়াত করছেন। তারা ভেবেছিলেন আগামি ঈদের আগেই রাস্তার কাজ শেষ হবে, মানুষের ভোগান্তি দুর হবে। কিন্তু সেরকম ভাব পাওয়া যাচ্ছে না।
নওগাঁ থেকে আসা মোটরসাইকেল আরোহী শিবলী নোমান জানান, এই সামান্য সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এই রুটে বাস চলাচল করছে না। ট্রেনই হচ্ছে এখন চলাচলের একমাত্র বাহন। কিন্তু তাতে সময়মত চলাচল করা যায় না। কারণ নির্ধারিত সময় ছাড়া ট্রেন পাওয়া যায় না। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজন হলে মোটরসাইকেল নিয়েই যাতায়াত করেন।
স্থানীয় লোকাল বাস চালক গোলাম মোস্তফা ও ভ্যানচালক আবু বক্কর ও সিএনজি চালক শরিফ হোসেন বলেন, এই টুকু সড়কে হেলে দুলে যানবাহন চলাচল করে। ভাঙ্গা ও সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত থাকায় যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। আর সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়। তখন যানবাহন নিয়ে চলাচলই দায় হয়ে যায়। অনেক সময় এ অবস্থায় চলতে গিয়ে যাত্রীরাও হয়রানীর শিকার হন এবং ধুলো-বালি আর কাদায় তাদের পোশাক নষ্ট হয়। এজন্য তারা দ্রুত সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ দেখতে চান।
নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান সরকার বাংলানিউজকে নির্ধারিত সময়ে সড়কের নাটোর অংশের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় গত ২ মার্চ সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী নাটোর-নওগাঁ সড়ক পরিদর্শনে আসেন। তিনি পরিদর্শন শেষে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার নিদের্শ দিয়েছেন। নাটোর সড়ক বিভাগ থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
এদিকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করতে দুই পাশে ইটের অ্যাজিং বসানো হয়েছে, কোথাও কোথাও পাথর দিয়ে রুলার দিচ্ছে। সড়কের দুই ধারে ছিটে ফোটা মাটি ভরাট করে নামমাত্র সংস্কার করা হচ্ছে। যা একটু বৃষ্টি হলেই তা ধুয়ে নিচে চলে যাবে। এতে সড়কের কাজ টেকসই হবে না। বিষয়টি স্থানীয়দেরর নজরে আসে এবং নতুন করে ভরাট মাটি দিয়ে কাজ করার দাবি জানান তারা।
এব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মীর হাবিবুল আলমের প্রতিনিধি আব্দুল গাফ্ফার বাংলানিউজকে বলেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
এসএম