ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ধানক্ষেতে সেচের পানি না পেয়ে আবারও বিষপান!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
ধানক্ষেতে সেচের পানি না পেয়ে আবারও বিষপান!

রাজশাহী: ধানের ক্ষেতে সেচের জন্য পানি না পেয়ে আবারও বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটল।

তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

ওই কৃষকের নাম মুকুল সরেন (৩৫)। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামের গোপাল সরেনের ছেলে। আর নিমঘটু গ্রামের পাশেই বর্ষাপড়া গ্রাম। এই গ্রামের দুই আদিবাসী দুই কৃষক বোরো ক্ষেতে পানি না পেয়ে গত বছররে মার্চে বিষপান করেছিলেন। পরে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের মৃত্যু হয়েছিল।

তারা হলেন- রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘটু গ্রামের অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি। এই ঘটনার পর সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। এই দুই আদিবাসী কৃষক বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন। সেখান থেকে পানি না পেয়ে জমিতেই বিষপান করেছিলেন তারা। এক বছর আগের সেই রেশ না কাটতেই আবার তাদের পাশের কৃষক মুকুল সরেন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন।

তার বাবা গোপাল সরেন জানিয়েছেন, বোরো ক্ষেতে সেচের পানির জন্য বিএমডিএর নলকূপ অপারেটর হাসেম আলীর কাছে এক সপ্তাহ থেকে ঘুরছিলেন তার ছেলে মুকুল। কিন্তু তাকে পানি দেওয়া হয়নি। এরপর রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে খবর পান, বিষপান করে তার ছেলে রাস্তায় পড়ে আছেন। পরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়। মুকুল আজ কথাই বলতে পারছেন না। তবে গতকালই বলেছেন, ধানের জমিতে পানি না পাওয়ার কারণে বিষপান করেছেন।  

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল জানান, তিনিও শুনেছেন বোরো ক্ষেতে সেচের পানি না পেয়ে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন মুকুল। পানি না পেলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তবে আসলেই শেষ পর্যন্ত বিষপান করেছেন কিনা তা বলতে পারছেন না।  

আর বিএমডিএর গভীর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, এই নলকূপের অধীনে থাকা অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক প্রায় সময়ই দেশীয় মদ পান করে থাকেন। আর মদ পান করে জমিতে সেচ দিতে আসেন। তবে মদ্যপ অবস্থায় পানি দিতে গেলে অনেক সময় পড়ে যান। আর পড়ে মারা গেলে এর দায়ও তাদের ওপর গিয়ে পড়বে। এজন্য নলকূপ পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত ছিল মদ্যপ অবস্থায় কোনো কৃষক পানির জন্য গেলে তাকে পানি দেওয়া হবে না।  

আর মুকুল মদপান করে আসার কারণে দুই দিন তাকে পানি দেওয়া হয়নি। এরমধ্যে কয়েক দিন আগে বৃষ্টিও হয়। তাই অন্য কেউও পানি নিতে যাননি। খরা বাড়ায় সবাই একসঙ্গে পানির জন্য চাপ দেন। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে পানি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন কোনো কারণে মুকুল বিষপান করেছেন কিনা সেই বিষয়টি তার জানা নেই।

আর বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, এই বিষয়টি তার জানা নেই। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এর আগে গত বছরের ঘটনার পর ওই গভীর নলকূপের আগের অপারেটরকে বাদ দিয়েছিলেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
এসএস/এসএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।