ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিত্তবান ব্যবসায়ীদের কাছে সহায়তা চাইলেন বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দর্জি ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (১২ এপ্রিল) বঙ্গবাজারের অসহায় দর্জি ব্যবসায়ীদের ব্যানারে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের খোলা স্থানে দাঁড়িয়ে এ সহায়তা চান তারা।
দর্জি ব্যবসায়ীরা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ পেলেও, আমারা তা পাচ্ছি না। আমাদের আর্তনাদ শোনার মতো কেউ নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সমাজের বিত্তবান ব্যবসায়ীদের কাছে আবেদন, আমাদের এই দুর্দিনে সাহায্য করুন।
মো. নাজিম নামের এক দর্জি ব্যবসায়ী বলেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় নাজিম টেইলার্স নামে আমার সেলাইয়ের দোকান ছিল। আগুনে সেটি পুড়ে গেছে। আমার মতো এখানকার সব দর্জি ব্যবসায়ী আজ নিঃস্ব। কিন্তু আমাদের কেউ খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি। খুচরা ব্যবসায়ীদের আপাতত অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ করে দেওয়া হলেও, আমাদের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমারা দর্জি ব্যবসায়ীরা মহানগর কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আমাদের আশ্বাস দিলেও কোনো সহায়তা এখনো পাইনি। আমাদের পকেটে চলার মতো অর্থও নেই। আমাদের দিকটা যদি কেউ না দেখেন, তাহলে আমরা যাবো কোথায়?
আদর্শ মার্কেটের জাকির টেইলার্সের মালিক আব্দুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, আমরা কেউ কেউ ২০-৩০ বছর ধরে এখানে সেলাইয়ের কাজ করছি। অগ্নিকাণ্ডের পর কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলছে না, কেউ আমাদের সহায়তা দিচ্ছে না। আমাদের বসার সুযোগও দিচ্ছে না। আমরা যদি এখানে অস্থায়ীভাবে বসতে পারি, তাহলে ঈদের আগে পাওনাদারের টাকাটা অন্তত পাবো। নইলে তো সেটাও পাবো না।
মো. আব্বাস নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের তালিকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের তো পকেটে চলার মতো কোনো টাকা নেই। তাই সমাজের বিত্তবানরা যদি এই দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ান, তাহলে অন্তত খেয়ে পরে বাঁচতে পারবো।
আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি এ সময় তারা বঙ্গবাজারের সব দর্জি ব্যবসায়ীদের দ্রুত পুর্নবাসনের দাবি জানান।
এদিকে আজ (১২ এপ্রিল) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজধানীর বঙ্গবাজারে অস্থায়ীভাবে চৌকি পেতে বসে ব্যবসা শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। ঈদের আগে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং আপাতত দিন যাপন করতে তাদের এই অস্থায়ী বসা।
এদিন (১২ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডস্থল ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের খোলা জায়গায় এখন আর কোনো পোড়া স্তূপ নেই। নেই টিন বা লোহা-লক্কড়। বরং সেই জায়গা ইট বিছিয়ে বালু ছিটিয়ে সমতল করা হয়েছে। আর ১.৭৯ একরের সেই খোলা জায়গায় অস্থায়ী চৌকি পেতে বসতে শুরু করেছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৪১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ৪৩টি ইউনিট যাওয়ার খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ৪৮টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।
আগুনে বঙ্গবাজার এলাকার মোট সাতটি মার্কেট পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চারটি পুরোপুরি ও তিনটি আংশিক। মার্কেটগুলো হলো- বঙ্গ ইসলামীয়া মার্কেট, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার মার্কেট, অ্যানেক্সকো টাওয়ার, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট।
এ ঘটনায় ডিএসসিসির পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে মোট ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
এসসি/এনএস