ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাঙালি কণ্ঠে একযোগে উচ্চারিত নির্ভয় গান 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৩
বাঙালি কণ্ঠে একযোগে উচ্চারিত নির্ভয় গান  ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

ঢাকা: রমনার বটমূলে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি বরণ করে নিল বাংলা নতুন বছর। সব বিভেদ ভুলে সর্বজনের মঙ্গল কামনায় পহেলা বৈশাখের ভোরে বাঙালি কণ্ঠে একযোগে উচ্চারিত হলো নতুন শপথ- শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান।

 

শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) ভোরে রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজনের শুরু হয় যন্ত্রসংগীতে রাগ আহীর ভৈরব পরিবেশনায়।  

নাগমায় শিল্পী শৌণক দেবনাথ ঋকের সঙ্গে তবলায় সংগত করেন শিল্পী গৌতম সরকার। এরপর ছায়ানটের বড়দের দলের সম্মেলক কণ্ঠে ধ্বনিত হয় রবীন্দ্রসংগীত ‘ধ্বনিল মধুর গম্ভীর’। সেঁজুতি বড়ুয়া শোনান রবীন্দ্রসংগীত ‘মনমোহন, গহন যামিনীশেষে।  

ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজনে পার্থ প্রতীম রায় পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত ‘রাত্রি এসে যেথায় মেশে; মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য শোনান রবীন্দ্রসংগীত ‘মোরে ডাকি লয়ে যাও’, রেজাউল করিম শোনান নজরুলসংগীত ‘ওগো অন্তর্যামী ভক্তের তব’। পরে খায়রুল আনাম শাকিল গান নজরুল সংগীত ‘অন্তরে তুমি আছো চিরদিন’, ইফফাত আরা দেওয়ান পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’, মইদুল ইসলাম শোনান নজরুলসংগীত ‘স্বদেশ আমার, জানি না তোমার’, ফারহানা আক্তার শ্যার্লি শোনান অতুল প্রসাদ সেনের ‘নিচুর কাছে নিচু হতে’। ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক  লাইসা আহমদ লিসাও শোনান অতুল প্রসাদের গান, তিনি পরিবেশন করেন ‘সবারে বাস রে ভাল’।

পরে আবুল কালাম আজাদ শোনান বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ‘মন মজালে ওরে বাউলা গান’, মো. খায়রুল ইসলাম শোনান লালনগীতি ‘মানুষ ছাড়া খ্যাপা রে তুই’।  

একক গানের সর্বশেষ শিল্পী হিসেবে চন্দনা মজুমদার শোনান লালনগীতি ‘এমন সমাজ কবে হবে গো সৃজন’।  

ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজনে বড়দের দল সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে নজরুল সংগীত ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল হে চির-নির্মল’ ও ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব’ ও সলিল চৌধুরীর গান ‘আমাদের নানান মতে’।  

ছোটদের দল সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে নজরুল সংগীত ‘মৃদুল মন্দে মঞ্জুল ছন্দে’, রবীন্দ্র সংগীত ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজের অপমান’, রবীন্দ্র সংগীত ‘আমি ভয় করব না, করব না’ ও ‘এই আমাদের বাংলাদেশ’। শেষে ছোট ও বড়দের দল রশীদউদ্দীন আহমেদের ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ ও শাহ আবদুল করিমের ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’ গান দুটি।  

একক ও সম্মেলক সংগীত পরিবেশনের পর মঞ্চে আসেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। তিনি নববর্ষে ছায়ানটের আবাহন বাণী পাঠ করেন।  

বৈশাখের ভোরের প্রথম সূর্যকিরণ তখন ঠিকরে পড়ছে অশ্বথবৃক্ষ ভেদ করে। প্রভাতী আয়োজনে আগত সকলে তন্ময় হয়ে শুনছে নববর্ষ কথন।  

লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ‘নববর্ষের সূর্যোদয়ের নবীনকিরণ যখন আমাদের আলোকিত করে, তখন ফিরে দেখি ফেলে আসা দিনগুলো। ’

ধারাবাহিক অগ্রগতি দেশের ভবিষ্যতের পদরেখা হিসেবে প্রাণে আশার সঞ্চার করলেও সামাজিক বিভাজন সব অর্জনের আনন্দ ম্লান করে দেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

লিসা বলেন, ‘লোভ, বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য আমাদের হতাশ করে, সমাজে বিভাজন রেখাকে গভীর ও বিস্তীর্ণ করে আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করে দেয়। ’ 

বিভক্তি গুছিয়ে অশুভ প্রবণতার বিনাশ ঘটাতে বাংলা সংগীতের পাশাপাশি সাহিত্য পাঠে মনোনিবেশ ঘটানোর আহ্বান জানান ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক।  

লিসা আরও বলেন, ‘আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলার সাহিত্য ও সঙ্গীত সমাজের শুভশক্তিকে জাগ্রত করে সম্প্রীতির বন্ধনকে নিবিড়তর করে চলেছে। দেশজুড়ে এই ধারার গান ও পাঠ সমাজের বিভক্তি অতিক্রম করুক, অশুভ প্রবণতার বিনাশ ঘটাক, নূতন বছরের অগ্রসর চিন্তার ভিত্তি নির্মাণ করুক। ’

শেষে তিনি অভ্যাগত সব সংস্কৃতিমনা মানুষের উদ্দেশে উচ্চারণ করেন প্রত্যয়ধ্বনি। দৃপ্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘শুভ কর্মপথে ধর নিৰ্ভয় গান। সব দুর্বল সংশয় হোক অবসান। ’ নতুন বঙ্গাব্দে সর্বজনের জীবনে মঙ্গল প্রার্থনায় কথন শেষ করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৩
এইচএমএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।