ঢাকা: দুর্ভিক্ষের কারণে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, বিশ্বে যখন দুর্ভিক্ষ শুরু হয় তখন এক ধরনের শ্রেণিভেদ তৈরি হয়।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত 'অবিস্মরণীয় এক দিন' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভাটির আয়োজন করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, আমি মনে করি আমরাও যদি মানুষের কাছে থাকি তাহলে আমরা মানুষের সমস্যা এবং সুখ-দুঃখকে ভালো করে বুঝতে পারব। তখনই এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ আজ যে পর্যায়ে এসেছে, তার জন্য অনেক দেশ যেমন বাংলাদেশের প্রশংসা করছে তেমন দুর্নামও করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমারা রক্তচক্ষু দেখিয়েছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের নৈতিকতা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়ে সেসব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জয় নিয়ে এসেছি। আজকেও বিভিন্ন দেশ চোখ রাঙায়। আমাদের সেদিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমরা আমাদের দেশের জন্য কাজ করলে এরা থামতে বাধ্য হবে। আমরা সে কাজই করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এবারও আমরা বিজয়ী হব।
জ্বালানি উপদেষ্টা আরও বলেন, সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসার ধারাবাহিকতায় আমরা একটি সমাজ গড়ে তুলব। যে সমাজে সবাই সুযোগ পাবে এবং আমরা দেশ হতে পুরোপুরি দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারব। আমাদের নতুন প্রজন্মকে এগুলো জানাতে হবে। পাশাপাশি তাদের ইতিহাস সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। তবে চেষ্টা সব সময় অব্যাহত রয়েছে। এ চেষ্টাটা যদি নতুন প্রজন্ম অব্যাহত রাখে। আমরা সবাই মিলে-মিশে যদি দেশটাকে সামনে নিয়ে গেলে অনেক অর্জন আমাদের পক্ষে সম্ভব।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, সে সময় বিদেশি সাংবাদিকদের কারণে মুজিবনগর সরকারের ব্যাপক প্রচার হয়েছিল। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল। আমরা আজকে জামায়াত শিবিরের চক্রান্তের কথা বলি। কিন্তু তৎকালীন তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার লোকও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। আওয়ামী লীগের ভেতরেও এরকম লোক অনেক আছে, আমাদের সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশর আহ্বায়ক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, '১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিদের কলকাতা থেকে আসার জন্য ৪০টি গাড়ি ব্যবহৃত হয়। যে গাড়িগুলোর ব্যবস্থা করেছিলেন নিহার চক্রবর্তী। তিনি সাংবাদিক বা রাজনৈতিক ব্যক্তি কেউই নন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। এই ৪০টি গাড়ি যাদের কাছ থেকে তিনি নিয়েছিলেন তাদেরকে তিনি বলে দিয়েছিলেন দয়া করে ট্যাংক ভরে তেল দিও যেন সারাদিন গাড়িটি চলতে পারে। ১৬ এপ্রিল রাতে কলকাতা প্রেসক্লাবে এই গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। অথচ আজও পর্যন্ত আমরা তাকে স্বীকৃতি দিতে পারিনি।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, মুজিবনগরে গার্ড অব অনার প্রদানকারী মাহবুব উদ্দীন আহমেদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. রাশিদ আফসারী ও সিনিয়র সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
ইএসএস/এসএএইচ