ময়মনসিংহ: বৈশাখের অগ্নিঝরা তাপদাহে নাজেহাল জনজীবন। দিন-রাত সমান তালে বয়ে চলা এই তাপদাহের মাঝে অসহনীয় লোডশেডিং ময়মনসিংহের নগর জীবনে অসহ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে বাংলানিউজকে খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভুঞা।
তিনি জানান, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে সর্তক দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লিখিত আবেদন দিয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে কেউ যেন ইস্যু বানিয়ে নাশকতা বা ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, রাত-দিন মিলে গড়ে ২০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি চলছে। এর মাঝে খাদ্য উৎপাদনে সেচ নিরবচ্ছিন রাখতে পিডিবির কিছু বিদ্যুৎ শহর থেকে পল্লী বিদ্যুতকে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারিভাবে এই পরিস্থিতি উত্তরণে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, চলতি রমজানে অসহনীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ইফতার, তারাবি কিংবা সেহরির সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। এ নিয়ে গ্রাহকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ব্যবসা বাণিজ্যেও সৃষ্টি হয়েছে বিড়ম্ভনা। সেই সঙ্গে একদিকে অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর অপরদিকে বৈশাখের প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য সরকারি দপ্তর, কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৮ এপ্রিল জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে- ময়মনসিংহ সদর (আংশিক), ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর, তারাকান্দা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যন্ত কম। অতিমাত্রায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তীব্র গরমে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। এতে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চলের অধীনে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে পাওয়ার গ্রিড অব কোম্পানি (পিডিবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এতে প্রায় ১২ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে দিনে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট এবং রাতে ১ হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও টাঙ্গাইলের সাতটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট।
সূত্র আরও জানায়, ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে জামালপুরের শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রটি পারিবারিক বিরোধে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ইউনাইটেড জামালপুর নামে অপর দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৩১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে জ্বালানি সংকটে সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট।
সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ নগরীর শম্ভুগঞ্জ এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদ-সংলগ্ন রুরাল পাওয়ার কোম্পানির (আরপিসিএল) বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে দৈনিক মাত্র ২০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পারছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
এছাড়াও ময়মনসিংহের সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গড়ে ৩ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের ডরিন পাওয়ার জেনারেশন এবং পল্লী পাওয়ার নামের ৪৬ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩৪ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের চাহিদা পূরণের জন্য আশুগঞ্জ ও কালিয়াকৈর থেকে দৈনিক ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। আর সেই আমদানি করা বিদ্যুৎ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ১৩২ কেভি দীর্ঘ সরবরাহ লাইনের কারণে গ্রাহক প্রান্তে লো-ভোল্টেজে বিদ্যুৎ বিভ্রাট সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নানা সংকটে উৎপাদন ঘাটতির কারণে এই লোডশেডিং সৃষ্টি হয়েছে। এতে গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ায় আমরা নিরাপত্তার ঝামেলা এড়াতে পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও হামলার ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৩