ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ করাসহ দুই সংগঠনের ৬ দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ করাসহ দুই সংগঠনের ৬ দাবি

ঢাকা: শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিরাপদ ও শ্রম আইনে বিদ্যমান অসঙ্গতিগুলো ঠিক করাসহ ছয় দাবি উপস্থাপন করেছে আইইউএফ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ওয়ার্কার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন।

শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেনের মানিক মিয়া হলে আন্তর্জাতিক শ্রমিক স্মৃতি দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আলোচনা সভায় দাবিগুলো উপস্থাপন করা হয়।

কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক হত্যা বন্ধ করতে সরকার ও মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো-
কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে ১০ জুন ২০২১ আন্তর্জাতিক শ্রম কনফারেন্সে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুত আইএলও রোডম্যাপ বাস্তবায়ন; পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক আইএলও’র মৌলিক কনভেনশন ১৫৫ প্রতিপালন আইন প্রণয়ন; নিয়োগকর্তারা নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণ করছে কিনা এজন্য ত্রিপক্ষীয় তদারকি কমিটি গঠন; প্রশিক্ষিত পরিদর্শক দ্বারা নিয়মিত কারখানার ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাধ্যতামূলক; শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশ প্রদানে ব্যর্থ ও আইন ভঙ্গকারী নিয়োগকর্তাদের জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা এবং নিহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ আইন তৈরি করা।

তোফাজ্জল হোসেনের মানিক মিয়া হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শ্রম আইনে আঙুল কেটে গেলে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া হয়। আর একজন মারা গেলে মাত্র ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। একজন শ্রমিকের জীবন এতই সস্তা? যারা এই শ্রম আইনগুলো তৈরি করেন, তাদের বলতে চাই- আমরা সব শ্রমিক চাঁদা তুলে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিই; আপনারা পারবেন আপনাদের আঙুল কেটে নিতে? এ ধরনের আইন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে শ্রম আইনে থাকবে না কেন? এটা তাহলে কোন ধরনের শ্রম আইন?

তিনি বলেন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে যারা কাজ করেন তারা নিজেদের অনেক বড় মনে করেন। কিন্তু আমি বলব তারাও কর্মক্ষেত্রে শ্রম শোষণের শিকার। কারণ, একই কাজে উন্নত বিশ্বে একজন শ্রমিক যে বেতন-ভাতা পায় বাংলাদেশের মাল্টিন্যাশনালের শ্রমিকরা সে বেতন ভাতা পায় না।

সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি কামরুল আহসান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ আইন যথেষ্ট নয়। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত পরিবেশ অত্যন্ত ভয়াবহ। শ্রমিকের নিরাপদ কর্ম পরিবেশ জরুরি। সম্প্রতি শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকারও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আইএলও শোভন কাজের কথা বলছে। শোভন কাজ মানে শোভন মজুরি, শোভন কর্মঘণ্টা, শোভন পরিবেশ।

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ছারোয়ার বলেন, বর্তমানে কিছু কারখানায় নিরাপত্তা কিছুটা বাড়লেও অধিকাংশই শিল্প কারখানায় বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলোয় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নেই। এসব কারখানার মালিকরা আইন লঙ্ঘন করে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করছে। তাছাড়া কারখানা নিয়মনীতি মানছে কিনা তা নজরদারীর ক্ষেত্রেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলির অবহেলা রয়েছে। অথচ একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ শ্রমিকের মৌলিক অধিকার হিসাবে আইএলও কর্তৃক স্বীকৃত। দেশের বেশিরভাগ কর্মস্থলে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদজনক পরিবেশ বজায় থাকায় শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা এবং আহতের সংখ্যা বাড়ছে। তাজরিন ফ্যাশন, রানা প্লাজা, ট্যাম্পাকো, হাসেম ফুডসে শিশুসহ শ্রমিকদের মর্মান্তিক জীবনহানি অনিরাপদ কর্মস্থলের ধারাবাহিক পরিণতির কয়েকটি উদাহরণ মাত্রা।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, আলোচনা করে কিছু হবে না। শ্রমিকদের কাছে গিয়ে মাঠে কাজ করতে হবে। শ্রমিকদের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। মালিকেরা পুলিশ, সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা, মামলা করবেই। শ্রমিকদের এরা প্রতিনিয়ত শোষণ করছে। আমাদের এক হতে হবে। এই দেশে শ্রমিক কৃষকের সংখ্যা বেশি। নিজেদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আজ মিছিল, ধর্মঘট নিষিদ্ধ করছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে সামনে আমাদের দাবিগুলো আমরা আদায় করতে পারবো।

আলোচনা সভা শেষে হাসেম ফুড ট্রাজেডিসহ কর্মক্ষেত্রে নিহতদের স্মরণে ১মিনিট নীরবতা পালন করেন উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ। আলোচনা সভায় ধারণা পত্র উপস্থাপন করেন আইইউএফ এশিয়া প্যাসিফিক ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর নাসরিন সুলতানা। আরও বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতা শামীম ইমাম, আব্দুল মান্নান, মো. কামরুল ইসলাম, মো. আবুল কালাম, মো. রেজাউল হক, মো. সোহাগ মিয়া প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন আইইউএফ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ওয়ার্কার্স কাউন্সিল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন সমূহের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য বৃন্দ এবং সঞ্জীব গ্রুপ ওয়ার্কার্স জাস্টিস কমিটির সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।