ঢাকা, শনিবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পাহাড়ে-সমতলে জমি দখলের অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পাহাড়ে-সমতলে  জমি দখলের অভিযোগ

ঢাকা: উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পাহাড় ও সমতলে বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমি দখল চলছে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’। এজন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ ছাড়াও বাঙালিদের সঙ্গে ‘সেতুবন্ধন রচনার’ প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছে সংগঠনটি।

শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ফোরামের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বান্দরবানের লামা উপেজলায় ম্রো এবং ত্রিপুরাদের ভূমি দখল, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের আক্রমণ, মধুপুরে বনায়ন ও কৃত্রিম লেক খনন প্রকল্পের নামে স্থানীয়দের ভূমি থেকে উচ্ছেদের অপচেষ্টা চলছে।   বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের রাখাইনদের মন্দিরসহ শ্মশানভূমি দখল, সিলেটে ভূমি থেকে খাসিয়াদের উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র চলছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত ৪০ লাখের বেশি ক্ষুদ্রনৃ-গোষ্ঠীর জনগণ নানা শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এই দীর্ঘ সময়ে তারা নিজেদের ভূমির অধিকার হারিয়েছে। বনায়ন, পর্যটন, রাবার বাগান ও উন্নয়নের নামে অব্যাহতভাবে তাদের ভূমি দখল চলছে। সব মিলিয়ে নানামুখী আগ্রাসনে তাদের জীবন আজ প্রান্তিকতার শেষ কিনারায় পৌঁছেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি উল্লেখ করে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন এখনও অকার্যকর। অন্যদিকে দেশের সমতল অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনে প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরকার বাস্তবায়ন করেনি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাঙালি জাতি ছাড়াও স্মরণাতীত কাল থেকে এদেশে  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রথা ও রীতি-নীতি, স্বতন্ত্র মূল্যবোধ নিয়ে বসবাস করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধেও তাদের ছিল গৌরবোজ্জ্বল অবদান। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণের সময় তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও সেই সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

এ অবস্থায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ছাড়াও গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজকে এই ‘ন্যায়ভিত্তিক সংগ্রামে’ একাত্ম হওয়ার আহ্বানও জানানো হয় সম্মেলনে।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, তাদের সঙ্গে বাঙালির সেতুবন্ধন রচিত হোক। আমরা একসঙ্গে পথ চলতে চাই। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমরাও একসঙ্গে হাঁটতে চাই।

সভাপতির বক্তব্যে ফোরামের সভাপতি জ্যেতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেন, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে। পাহাড়ে কিংবা সমতলে বসবাসরত  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নানা রকম সংকট উঠে এসেছে সবার আলোচনায়। সেই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে।

সম্মেলনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, নারী নেত্রী খুশি কবির, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিবিবির সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স, সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, পরিবেশ আইনজীবী সমিতি বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আদিবাসী ফোরামের নারী বিষয়ক সম্পাদক ফ্লোরা বাবলী তালাং, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক চাইথোয়াই মারমা, সংগঠনের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ, রবীন্দ্রনাথ সরেন, জাতীয় কমিটির সদস্য কৃষ্ণপদ মুণ্ডাও বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
এসএমএকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।