ঢাকা: গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চান্দুরা এলাকায় বসবাসকারী আলমগীর (৪২) পেশায় একজন ওষুধ বিক্রেতা।
গত ২৯ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে তিনি জমি কেনার জন্য কালিয়াকৈরের চান্দুরা চৌরাস্তা এলাকায় যান।
পরে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজি করে কোথাও তার কোনো সন্ধান না পেয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারা।
পরদিন ৩০ এপ্রিল সকাল ১১টায় আলমগীরের স্ত্রীর মোবাইলে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানায়, তারা আলমগীরকে অপহরণ করেছেন এবং আলমগীরের নির্যাতনের বিভিন্ন চিৎকার শুনিয়ে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন।
দাবিকৃত টাকা না পেলে তারা আলমগীরকে প্রাণে মেরে ফেলবেন বলেও হুমকি দেন।
এভাবেই জমি বিক্রির কথা বলে ডেকে নিয়ে অপহরণ ও নিজেদের আস্তানায় আটকে রেখে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করতো একটি চক্র।
এদিকে, অপহরণকারীদের দাবিকৃত টাকা জোগাড় করতে না পেরে নিরুপায় হয়ে র্যাবের সঙ্গে যোগযোগ করেন পরিবারের লোকজন। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আলমগীরকে উদ্ধার এবং নারীসহ ৮ অপহরণকারীকে আটক করে র্যাব-১০ এর সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. সিয়াম আল জেরিন তালুকদার (৩৩), মো। রাসেল শেখ ওরফে মিঠু (৩৩), মো. শহিদুল ইসলাম (৩৭), প্রণব নারায়ণ ভৌমিক (৫০), মো. আলমগীর (৪২), আ. রব খান (৭৮), সৈয়দা জান্নাত আরা উর্মি (২৭) ও ইসরাত জাহান সায়লা (২৯)।
সোমবার (১ মে) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন বউবাজার ছনটেক এলাকায় অভিযান চালিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধারসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, ৩টি চাকু, ১টি হাতুড়ি, ১টি আয়রন মেশিন, ১টি লাঠি, ১টি বেলনা, ১টি বেল্ট, ১টি হুক্কা ও ১৩টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব-১০ অধিনায়ক জানান, অপহরণকারী চক্রটি আলমগীরের কাছে জমি বিক্রির কথা বলে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাতে থাকে। ২৯ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে খেলনা পিস্তল দিয়ে তাকে মৃত্যুর ভয় দেখায়। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে যাত্রাবাড়ী থানাধীন ছনটেক বউবাজার এলাকায় তাদের আস্তানায় নিয়ে আসে।
সেখানে আলমগীরকে সবাই মিলে লাঠি, বেলনা ও বেল্ট দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর শরীরের পেছনের অংশে গরম তেল ঢেলে দেয়। পরবর্তীতে শরীরের ওই স্থানসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে আয়রন মেশিন দিয়ে ছেঁকা দিয়ে চামড়া তুলে ফেলে নির্মম নির্যাতন চালাতে থাকে। এসব করে তাদের দাবিকৃত মুক্তিপণ আদায়ের জন্য চাপ দিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তাররা বেশ কিছুদিন ধরে গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমি কেনার বাহানাসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিত্তশালীদের ডেকে এনে খেলনা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে অপহরণ করতো। পরে তাদের যাত্রাবাড়ীর ছনটেকে নিজেদের ডেরায় আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হতো।
নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠাতো। প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করতো।
এদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ছোটন আগেও ভুয়া পুলিশের মামলায় গ্রেপ্তার হন বলেও জানান র্যাবের এই অধিনায়ক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘণ্টা, মে ২, ২০২৩
পিএম/এনএস