ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ক্ষোভ সম্পাদক পরিষদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, মে ২, ২০২৩
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ক্ষোভ সম্পাদক পরিষদের

ঢাকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সালে প্রণয়ণ করার পর থেকে এই আইনটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে গণমাধ্যমের ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করায় এই আইন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সম্পাদক পরিষদ।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৩ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা সকল প্রকার মানবাধিকারের চালিকাশক্তি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।  

সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আজকে আমরা বলছি গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করছে। কিন্তু কতটুকু মালিকপক্ষ করছে, কতটুকু কর্পোরেট কোম্পানিগুলো করছে তা দেখি না। টেলি কোম্পানিগুলো দ্বারা গ্রাহকরা বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছে, কিন্তু আপনারা তা লেখেন না। কারণ তারা আপনাদের বিজ্ঞাপন দেয়। কিন্তু এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যুক্ত না।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন দরকার। অনতিবিলম্বে তথ্যমন্ত্রীর কথা শুনে কোন কোন জায়গায় সংশোধন লাগবে সেগুলো করে ফেলা দরকার। এটা ঝুলিয়ে রাখা ঠিক না।

ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, আমার এখন কথা বলতে ভয় লাগে। কারণ মিস ইন্টারপ্রেট করে। সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ আজকে নতুন কিছু না। যুগে যুগে সব শাসকরাই এটা করে এসেছেন। বিভিন্ন সময় ইত্তেফাক পত্রিকাও বন্ধ করা হয়েছিল। সবসময় যারা রাষ্ট্র চালায় বা যাদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাদের দ্বারাই কণ্ঠ রোধ করা হয়। আমরা বাঙালিরা সবসময়ই সংগ্রাম করেছি, করে যাচ্ছি।

নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর বলেন, যারা মুক্তভাবে মত প্রকাশ করতে চায় ও স্বচ্ছভাবে দেশের অসংগতিগুলো পত্রিকায় তুলে ধরতে চায় তারাই এর (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) ভিক্টিম। একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে ভিন্ন মত পোষণ করা যায় না। অনুনয় বিনয় করে কোনো লাভ নেই। আমরা সরকারের সঙ্গে বহুবার কথা বলেছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে, কিন্তু কিছুই বদলায়নি। এ আইন হয়েছে।

সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বড় বড় দেশে যখন কোনো আইন হয় তখন ছোট দেশগুলোতে সেটার কপি হয়। কতিপয়ের কাছে অধিকাংশ গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ। তেমনি নানা ধরনের  আইন-বিধিনিষেধ মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। সত্যের পক্ষে যখন সাংবাদিকরা দাঁড়াবে, তখন পৃথিবীও সাংবাদিকদের পক্ষে দাঁড়াবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮৩ শতাংশ ভুক্তভোগী হচ্ছে নারীরা। আর ২৭ শতাংশ ভুক্তভোগী হচ্ছে সাংবাদিকরা।

তিনি আরও বলেন, শুধু আইনের দোহাই দিলেই হবে না। এখন পেশাদার সম্পাদক আর মালিকের সম্পাদকের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়েছে। কে পেশাগত কাজ করছে ,আর কে মালিকের স্বার্থের জন্য কাজ করছে সেটাও বুঝতে হবে।

সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা যারা সাংবাদিকতায় আছি, তারা জানি কী অবস্থায় কাজ করছি। সাংবাদিকতা পেশাই আজ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পেশাটাকে রক্ষা করার জন্য একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। পাকিস্তান আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। স্বাধীনের পরও আমাদের সেই লড়াই করতে হচ্ছে।

সরকার অনেক সময় বলেন এই সময়ে সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা আছে। শহর ও গ্রাম থেকে হাজার হাজার পত্রিকা বের হচ্ছে। সংখ্যা যদি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মানদণ্ড হতো তাহলে পঙপাল হতো সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী। সংখ্যা দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নির্ধারণ করা ভুল।

ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, এখন সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।   সরকারের মধ্যেও এই আইন নিয়ে অস্বস্তি আছে। তারা বলছে এটা সংশোধন করবে, কিন্তু করছে না।

সভাপতির বক্তব্যে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন,  ২০১৮ সালে আইন প্রণয়নের সময় বলা হয়েছিল এগুলো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না। কিন্তু ৫ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ আইন প্রয়োগ হচ্ছে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে।

এসময় তিনি চারটি দাবি জানান। সেগুলো হচ্ছে-

১. স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যেসব আইন প্রক্রিয়াধীন আছে, সেই প্রক্রিয়া এখনই স্থগিত করা। আইনগুলোর মধ্যে যেসব ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ব্যাহত করতে পারে, সেগুলো আইন থেকে বাদ দেওয়া।

২. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। আর যদি তা বাতিলে সরকারের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে এমন একটি ধারা যুক্ত করতে হবে, যেখানে বলা থাকবে, এই আইন গণমাধ্যম, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রযোজ্য নয়। সাংবাদিকতার কারণে আজ পর্যন্ত যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে হবে।

৩. যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেটি সরকার উদ্যোগী হয়ে যেন একেবারেই মুছে ফেলে।

৪. সাংবাদিকতার সুরক্ষার জন্য আইন হতে পারে, যা সংবিধানের চেতনার মধ্যে রয়েছে।

সম্পাদক পরিষদের  সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, মে ২, ২০২৩
এমকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।