ঢাকা, বুধবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

প্রথম স্ত্রীর প্ররোচনায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুন!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৩
প্রথম স্ত্রীর প্ররোচনায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুন! গ্রেপ্তার স্বামী সাহেব আলী

ফরিদপুর: ফরিদপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া পাটকলের নারী শ্রমিক মনিরা আক্তারের (২৬) হত্যা রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত মনিরার স্বামী মো. সাহেব আলী (৩৮) ও সতিন জ্যোৎস্না বেগমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ক্রমাগত পারিবারিক কলহ ও প্রথম স্ত্রীর প্ররোচনায় দ্বিতীয় মনিরাকে খুন করে স্বামী সাহেব আলী।

শনিবার (০৬ মে) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানায় পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে গত ২৩ এপ্রিল বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে  মানিকনগর সেতুর পাশে রতনের পুকুর পাড় থেকে মনিরার মরদেহ উদ্ধার করে নগরকান্দা থানার পুলিশ। মনিরা নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডুবরি গ্রামের জাফর হোসেন ও রোকেয়া বেগমের মেয়ে। তিনি ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা এলাকায় অবস্থিত জোবায়দা-করিম জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তিন বছর আগে তার সঙ্গে নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের কোনাগ্রামের সাহেব আলীর বিয়ে হয়। ১২ বছর আগে সাহেব আলী জ্যোৎস্না বেগমকে বিয়ে করেন।

তিনি আরও বলেন, জ্যোৎস্নার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কহলদিয়া গ্রামে। সাহেব আলীর ১০ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। জ্যোৎস্নার সঙ্গে সাহেব আলীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে এ কথা বলে তিনি মনিরাকে বিয়ে করেন। সাহেব আলী অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মনিরাকে বিয়ে করলেও সাহেব আলী কোনাগ্রামে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। অপরদিকে মনিরা বাখুন্ডা এলাকায় তার ফুপু ফুলজান খাতুনের সঙ্গে থাকতেন। ফুলজান খাতুন ওই পাটকলে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন আরও জানান, সাহেব আলীর সঙ্গে মনিরার পারিবারিক সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তিনি (সাহেব আলী) মনিরাকে নানা বিষয়ে সন্দেহ করতেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন বিদেশ থেকে আসার পর সম্প্রতি তার প্রথম স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমের সঙ্গে সাহেব আলীর সদ্ভাব গড়ে ওঠে।

মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন আরও বলেন, এ অবস্থায় পারিবারিক কলহ এবং প্রথম স্ত্রীর প্ররোচনায় সাহেব আলী তার স্ত্রী মনিরাকে গত ২২ এপ্রিল বিকেলে বেড়াতে বের হওয়ার নাম করে তালমা ইউনিয়নে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে  মানিকনগর সেতুর পাশে রতনের পুকুর পাড়ে নিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং গলা, বুক ও পেটে ছুরি মেরে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার (০৫মে) ভোরে ঢাকার দোহার থানা এলাকা থেকে সাহেব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কহলদিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে সাহেব আলীর বড় স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বর্তমানে জেলহাজতে রায়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় যে ছুরি দিয়ে মনিরাকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ছুরিটি পুলিশ উদ্ধার করেছে। এছাড়া মনিরা হত্যার ঘটনায় ফুপু ফুলজান খাতুন বাদী হয়ে গত ২৩ এপ্রিল নগরকান্দা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শেখ মো. আব্দুল্লাহ বিন কালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল, নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল ইসলাম ও গোয়েন্দা পুলিশ ভাঙ্গা জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুনুর রশিদ।

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরকান্দা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিকাশ মণ্ডল বলেন, শনিবার (০৬ মে) দুপুরে সাহেব অলীকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে পরে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৩
জেএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।