ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাগুরায় যে হোটেলে খাওয়ার সময় টিনের চালে পড়ে ‘বৃষ্টি’

জয়ন্ত জোয়ার্দ্দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৩
মাগুরায় যে হোটেলে খাওয়ার সময় টিনের চালে পড়ে ‘বৃষ্টি’

মাগুরা:  এসি নেই, তবুও এই গ্রীষ্মের তাপদাহে কক্ষের তাপমাত্রা ২৭-২৮ ডিগ্রি। খরার এই মৌসুমে টিনের চালে ঝুমঝুম বৃষ্টির আওয়াজ।

ঢেউটিন বেয়ে ঝরছে জল। আর এমন ঠাণ্ডা নির্মল পরিবেশে হোটেলে বসে খাবার খাচ্ছেন - ভাবতেই ভালো লাগবে যে কারও।  

সেই হোটেল ভেসে উঠবে কল্পনায়, সঙ্গে সঙ্গে খিদেয় পেটে টানও পড়বে। তীব্র গরমে যেখানে জনজীবন অতিষ্ঠ সেখানে এমন প্রাকৃতিক পরিবেশের হোটেলে খেতে চাইবেন না - এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না নিশ্চিত।  

কল্পনায় নয়, টিনের চালায় ওয়াটার কুলিং সিস্টেম লাগিয়ে এমন পরিবেশেই খাবার হোটেলের ব্যবসা করছেন মাগুরার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম।  

বাইরে যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থাকে সেখানে কুলিং সিস্টেমের কারণে রবিউলের হোটেলের ভেতরের তাপমাত্র থাকে ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি পর্যন্ত। কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টি করে টিনের চালকে ঠাণ্ডা রাখার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।  

যেভাবে কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টি করা হয় রবিউলের হোটেলে

জানা গেছে, চলতি বছর বেশি গরমে অনুভূত হওয়ায় হোটেলে মানুষ খাবার খেতে আসতে চাইছিলেন না। সেই চিন্তা থেকে মানুষকে একটু শান্তি দিতে এ উদ্যোগ  নিয়েছেন রবিউল।  

তার এই অভিনব উদ্যোগ জেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে। শীতল পরিবেশে স্বস্তিতে খাবার খেতে তার হোটেলে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা।

রোববার (১৪ মে) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রবিউল ইসলামের হোটেলে কাস্টমারের ভিড়। খাবার খেতে অপেক্ষায় অনেকে। টেবিলগুলোও ব্যস্ত। এ সময় শুরু হলো বৃষ্টি। অথচ আশপাশে আর কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে না। দেখা গেল, রবিউলের হোটেলের টিনের চালে ঘুরছে কয়েকটি গার্ডেনিং ফোয়ারা। সেখান থেকে পানি বের হয়ে বৃষ্টি আকারে ভিজিয়ে দিচ্ছে তপ্ত চাল। এতে রুমের গরম গুমোট হাওয়া ঠাণ্ডা হচ্ছে। ফ্যানের বাতাস পরিবেশকে শীতল করে দিচ্ছে।

দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরেই এই খাবার হোটেল ব্যবসায় যুক্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রবিউল। তার হোটেলে এমনিতেই কাস্টমার বেশি হয়। কারণ তার হোটেলে খাসি,মুরগি,মাছ,সবজি সবই পাওয়া যায়। বিশেষ করে রেজিস্ট্রি অফিসের পেছনে হওয়ায় এখানে সপ্তাহের অফিস ডেতে বেশি লোক সমাগম হয়।

তবে এই কুলিং সিস্টেমের কারণে কাস্টমারের আনাগোনা একটু বেশি।  

শীতল পরিবেশে বৃষ্টির শব্দে খাবার খাচ্ছেন কাস্টমাররা

এ বিষয়ে রবিউল ইসলাম বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এই হোটেল ব্যবসায় জড়িত। আমার দুই চোখ নষ্ট হয়েছে অনেক বছর আগে। তাই লেখাপড়া বেশিদূর করতে পারিনি। মানুষের ভালবাসা ও দোয়ায় ব্যবসায় ভালোই চলছিল। সম্প্রতি লক্ষ্য করলাম গরমের কারণে আমার হোটেলে মানুষ আসতে চাইতো না। টিনের চালার হোটেল। তাই গরম বেশি। সে কারণে কাস্টমারের সংখ্যা অনেক কম ছিল। এ সময় রুমের তাপ কমানোর বুদ্ধি বের করি। মূলত ইন্টারনেট থেকে দেখে আমি আমার ঘরের চালার উপর ওয়াটার কুলিং সিস্টেম লাগাই। এটা করতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা।  

এতে তাপমাত্রা কমায় কাস্টমার আসছেন বলে জানান তিনি।

খাবার খেতে আসা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রবিউল ভায়ের এই হোটেলে টিনের চালার উপর কৃত্রিম বৃষ্টি হয়। এখানে খাবার খেতে আসলে বর্ষা ঋতুর কথা মনে পড়ে। আর ঘরের ভেতরটা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। গরম কম লাগে তখন। স্বস্তিতে খাবার খাওয়া যায়।  

মাগুরা জেলা পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি এটিএম আনিছুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। তাছাড়া অপরিকল্পিতভাবে গাছকাটা, নদী নালা, খাল বিল ,পুকুর ডোবা থেকে ভূর্গস্থ পানির লেয়ার নিচে নেমে যাচ্ছে। ছাড়পত্র ছাড়াই যেখানে সেখানে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ফলে এখন সবখানে তীব্র গরম অনুভূত হয়। পরিবেশে ক্ষতি হয় এমন উদ্যোগ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে রবিউলের এমন উদ্যোগ খাবার খেতে আসা মানুষদের একটু হলেও শীতল পরশ দেবে।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।