ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

বরিশাল সিটি ভোটে ফ্যাক্টর নারী ভোটার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
বরিশাল সিটি ভোটে ফ্যাক্টর নারী ভোটার

বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় ফ্যাক্ট হচ্ছে নারী ভোটার। এর কারণ হিসেব করলে দেখা যায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যাটাই অনেক বেশি।

আর সেই হিসেবে মেয়রসহ সব প্রার্থীদের জয়লাভের জন্য নারী ভোটারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও নির্বাচন বিশ্লেষক মো. সোহেল রানা বলেন, দেশের সবস্তরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। তথ্য অনুযায়ী বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নারী ভোটার বেশি। এক্ষেত্রে সহজেই বলা যায়, নারীরা ভোটের রাজনীতিতে এখানে প্রতিনিধি নির্বাচনে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে নারীরা বরিশাল সিটি করপোরেশনে প্রতিনিধিদের জয়-বিজয় নির্ধারণে বিরাট ভূমিকা পালন করবেন বলেই আমার ধারণা। নারীরা রাজনৈতিকভাবে আজ সচেতন। প্রার্থীদের জন্য এটি নতুন করে ভাবনার সুযোগ করেছে। একটি নারীবান্ধব সিটি করপোরেশনের বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের রূপরেখা যেকোনো প্রার্থীকে এগিয়ে রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। নারীকে নেহাত ভোটার না ভেবে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের পরামর্শ ও অংগ্রহণের সুযোগও তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সমাজের সব শ্রেণি-পেশার নারীকে একটি সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামোয় আনবার উদ্যোগ ভীষণ প্রয়োজনীয়। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা যারা পাবেন, তারা যত দ্রুত এ বাস্তবতাটি অনুধাবন করবেন ততই সবার জন্য মঙ্গল।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মোট দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। সেই হিসেবে পুরুষদের দেয়ে নারী ভোটার ১ হাজার ৩২০ জন বেশি।

এদিকে নগরের একাধিক এলাকায় সাধারণ নারী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থীর গুরুত্ববোধের বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে দেখছেন তারা। নগরের রসূলপুর এলাকার বাসিন্দা ও খেয়া পারাপারের মরিয়ম বলেন, ভোটের আগে আমাদের কদর বেশি থাকে কিন্তু ভোট হয়ে গেলে কেউ খোঁজ রাখে না। তাই যে খোঁজ রাখবে না তার পক্ষে যাবো তো নাই, প্রয়োজনে ভোটই দেবো না।

একই এলাকার বাসিন্দা ও গৃহিনী শাহনাজের দাবি, বিপদে-আপদে যে পাশে থাকবে তাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবো। তবে আমাদের এলাকার উন্নয়ন প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণই করে গেছেন, এরপর আরও কয়েকজন মেয়র থাকলেও কেউ তারা আমাদের খোঁজ নেননি। তাই এখন কে আমাদের মেয়র হয়েও খোঁজ নেবেন, তাকেই আমরা ভোট দেবো।

এদিকে দুঃশাসন হলেও যার ভয়ে প্রতিবাদ করা যাবে না, বিচার চাওয়া যাবে না সেরকম প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোট দিতে চান না নগরের আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষার্থী নার্গিস।

তিনি বলেন, যে আমাদের এ প্রিয় শহরকে নিরাপদ রাখবে, যার কাছে নগর পিতার আসন নিরাপদ থাকবে ও নিজের সমস্যার কথা সরাসরি বলতে পারবো, যার কাছে সমাধান পাবো তাকেই ভোট দিতে চাই।

যদিও আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়নি, তবে ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছে যেসব দলীয় ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তারা এরইমধ্যে ভোট চেয়ে কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন নগরজুড়ে। তবে বাস্তব চিত্র বলছে, প্রচারণায় পুরুষদের পাশাপাশি নারী ভোটারদের গুরুত্ব দিয়ে মাঠের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন আাওয়ামী লীগ ও সংসদীয় বিরোধীদল জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

এরই মধ্যে এ দুই দলের প্রার্থী নারী ভোটারদের টার্গেট করে নির্বাচনী প্রচারণায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন। যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) এর পক্ষে তার স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের পক্ষে তার স্ত্রী ইসমত আরা ইকবাল নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন। তারা নারী হওয়ায় সহজেই নারী ভোটারদের কাছে গিয়ে নিজেদের প্রার্থীর কথা তুলে ধরতে পারছেন।

নারী ভোটারদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, যেখানেই আমি যাচ্ছি, সেখানে মানুষ আমাকে ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। আমি বিশ্বাস করি মানুষ আমাকে ভোট দেবে।

প্রধানমন্ত্রী আস্থার জায়গা থেকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন জানিয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, আমাকে বিজয়ী করতে আমার স্ত্রীসহ সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন। নারীদের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করার পরিকল্পনা আমার রয়েছে, বিশেষ করে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেবো।

এদিকে নারীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস।

তিনি বলেন, বরিশালে পুরুষদের থেকে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের গুরুত্বটা প্রার্থী হিসেবে আমাকে আগে উপলব্ধি করতে হবে। আমি বিজয়ী হলে শুধুমাত্র শিশু ও নারীদের জন্য বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল গড়তে চাই এ শহরে, যেখানে চিকিৎসক থেকে সব জায়গাতে নারীদের কর্মসংস্থানও হবে। নারীদের জন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ বা কাজের জায়গাগুলোতে নারীবান্ধব বিশেষ সেবা চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করার ইচ্ছেও আমার রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ওই দুই প্রার্থী ব্যতিত ১০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করা মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সিটির সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা প্রয়াত কামরুল আহসান রূপন আলোচনায় থাকলেও, নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে এখনও তেমন একটা তোড়জোড় নেই বাকি প্রার্থীদের।

বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।