ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

জিনের বাদশার খপ্পরে নারী, টাকা ফেরত চাওয়ায় হত্যা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৩
জিনের বাদশার খপ্পরে নারী, টাকা ফেরত চাওয়ায় হত্যা!

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে জিনের বাদশার ফাঁদে পড়ে টাকা ও সোনার গহনা হারান সামিমা আক্তার সোনিয়া (২৫) নামে এক নারী।

সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এক পর্যায়ে টাকা-গহনা ফেরত চাইলে সেই নারীকে খুন করেন সেই প্রতারকচক্র।

 

ওই নারীর সর্বস্ব লুটে তাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সোহেল (৩৫) ও আফরোজা (৩২) নামে এক দম্পত্তির বিরুদ্ধে। তারা নিহত সোনিয়ার প্রতিবেশী।

শনিবার (২৭ মে) গভীর রাতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোনিয়ার মৃত্যু হয়।  

পরদিন আজ দুপুরে (রোববার) থানা পুলিশ মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, নিহত সনিয়া জেলার বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের মানিকপীর এলাকার ছলেমান আলীর মেয়ে। স্বামীর সংসার ছাড়া হয়ে শহরের ধাক্কামারা এলাকায় চার বছরের ছেলে সন্তান ও ছোট বোনকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেশী সোহেল ও আফরোজা দম্পতি সোনিয়াকে বিভিন্নভাবে লোভ লালসা দেখিয়ে আসছিলেন। এর মাঝে জিনের বাদশার কথা বলে শহরে জমি কেনাসহ একের পরিবর্তে তিনগুণ টাকা ও সোনা-গহনা দেওয়ার লালসা দেওয়া হয় সোনিয়াকে। এভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঙ্কে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।  

সোনিয়া সেসব টাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে ও ধার দেনা করে দিয়েছিলেন। সবশেষ গত শনিবার ঘরের বাকি জিনিসপত্র বিক্রি করে সোনিয়া। এর মাঝে বিকেলের দিকে মাদরাসার এতিম বাচ্চাদের কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে সোনিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় আফরোজা।  

এর পর অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে সোনিয়া জানায় তাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। দ্রুত পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যান সোনিয়া। ঘটনার পর থেকে এলাকায় চাঞ্চল্যকর অবস্থা বিরাজ করছে।

সোনিয়ার ছোট বোন সাদিয়া আক্তার অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, অনেক কিছু পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়েছিল সোহেল ও আফরোজা। আমরা গরিব পরিবারের হওয়ায় তাদের ফাঁদে পা দেয় আমার বোন। এর মাঝে আমার বোনের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে তারা। শনিবার এতিমখানার তিন বাচ্চাকে জোব্বা কিনে দেওয়ার কথা বলে বোনকে হিমালয় পার্কে নিয়ে যায়। এর পর তাকে জোর করে বিষ খাইয়ে তার কাছে থাকা আরোও ২০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল তারা নিয়ে নেয়। বোন অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে সব খুলে বলে। এর পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আমরা এ ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে কঠিন বিচার দাবি করছি।

নিহতের ছোট ভাই মনিরুজ্জামান মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী আমাদের শেষ করে দিয়েছে। মৃত্যুর আগে স্বামী-স্ত্রীর নাম নিয়ে তাদের সব কর্মকাণ্ডের কথা বলে গেছে আমার বোন। তাদের জন্য এর আগেও আমার বোন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। আফরোজার স্বামী সোহেল চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিল। তাও দেয়ার কোন খবর ছিল না। পাওনাদারদের চাপে আমার বোন তাদের কাছে টাকা চায়। এর পর তারা স্বামী- স্ত্রী টাকা ফেরত দেওয়ার নাম করে আমার বোনকে হত্যা করে। আমরা এ ঘটনায় তাদের কঠিন বিচার দাবি করছি।

নিহতের মামা এনামুল হক ও বোনজামাই শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী (সোহেল ও আফরোজা) দীর্ঘদিন ধরে সোনিয়ার সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে পাওনাদারের চাপে ওই দম্পতিকে টাকা ফেরতের জন্য বলে সে। এর পর তারা কৌশলে সোনিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিষ খাইয়ে হত্যা করে।

ঘটনার পর অভিযুক্তদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওই দম্পতিকে পাওয়া যায়নি। পরে আফরোজার মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেন। বাংলানিউজের কথা শুনে ফোন কেটে বন্ধ করে দেন।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাক্তার ফারহান তানজিল বাংলানিউজকে বলেন, অপরিচিত বিষক্রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ওই নারী। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে রংপুরে রেফার্ড করা হয়। এর মাঝে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলে মৃত্যুর মূল কারণ জানা যাবে।

পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ভবেশ চন্দ্র পাল বাংলানিউজকে বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্ট, মে ২৮, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।