ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বর্জ্যে দূষিত ফুলজোড় নদীর পানি, মারা গেছে ১৪ কোটি টাকার মাছ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
বর্জ্যে দূষিত ফুলজোড় নদীর পানি, মারা গেছে ১৪ কোটি টাকার মাছ 

সিরাজগঞ্জ: কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্যে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে ফুলজোড় নদীর পানি। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে এ নদীর অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে দূষণ।

মরে ভেসে উঠছে মাছসহ জলজ প্রাণী।  

এছাড়াও দূষিত পানির দুর্গন্ধে নদী পাড়ের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। নদী দূষণের তীব্রতায় ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে প্রায় দুই শতাধিক মৎস্যচাষি। ফুলজোড় নদীতে খাঁচায় চাষ করা ৭০ জন চাষির প্রায় ১৪ কোটি টাকার মাছ মারা গেছে বলে দাবি তাদের।  

বুধবার (৩১ মে) দুপুরে রায়গঞ্জের নলকা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ বাজারে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে মৎস্যচাষিরা বলেন, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ছোনকা এলাকায় মজুমদার ফুড প্রডাক্ট ও এস আর কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির বিষাক্ত বর্জ্য ফুলজোড় নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানি মারাত্মক দূষিত হয়ে মাছ, ঝিনুক, শামুকসহ জলজ প্রাণী মরে গেছে। চান্দাইকোনা থেকে নলকা পর্যন্ত দুই শতাধিক মৎস্যচাষি এক হাজারেরও বেশি খাঁচায় মাছ চাষ করছিলেন। প্রতি খাঁচাতে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মণ মাছ ছিল। যা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু নলকা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ নলকা, ফরিদপুর, রামপুর ও তিন নান্দিনা এলাকায় ৭০ জন চাষির ১৪ কোটি টাকার মাছ নষ্ট হয়েছে।  

চাষিরা ২০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান। পথে বসে গেছেন তারা। ওইসব কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ক্ষতিপূরণের দাবি জানান বক্তারা।  

নলকা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কার সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাওসার হোসেন, সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ বকুল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম মোস্তফা মিয়া, মৎস্যচাষি মাহবুবুর রহমান মিঠু, আল মামুন খান, ভরত চন্দ্র সাহা, জহুরুল ইসলাম, লোকমান হোসেন, আব্দুল মতিন সরকার প্রমুখ।  

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য অফিসার মো. শাহীনূর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরা মাছ দেখেছি। চান্দাইকোনা থেকে নলকা পর্যন্ত নদীতে আর কোনো মাছ বা অন্য কোনো প্রাণীও বেঁচে নেই। এখানকার মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বলা হয়েছে।  

জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বগুড়ার শেরপুরে দুটি কেমিক্যাল ফ্যাক্টরির বর্জ্যে ফুলজোড় নদীর পানি দূষিত হয়ে গত কয়েকদিন ধরে মাছ মরা শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয় এ নদীতে গোসল করে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং গরুকে গোসল করানোর ফলে গরু মারা গেছে বলেও শুনতে পেরেছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে এর বিষাক্ত কেমিক্যালে মাছ মরার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। বগুড়া জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়েছে। খুব শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।  

তিনি আরও বলেন, মৎস্যচাষিদের ক্ষতিপূরণের জন্য তালিকা করে সরকারের নজরে আনা হবে। এছাড়াও ফুলজোড় নদীতে মানুষ ও গবাদি পশু যাতে গোসল না করে সে বিষয়ে সচেতন করতে ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩ 
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।