নরসিংদী: নরসিংদীর শিবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ খান (৭০) আর নেই। গুলিবিদ্ধ হওয়ার তিনমাস পর বুধবার (৩১ মে) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবীদ।
এদিকে হারুনুর রশিদ খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তারা মরহুমের পবিত্র আত্মার মাগফিরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
আর হারুনুর রশিদ খানের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শিবপুরে বিক্ষোভে নামে হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী। জেলা শহরের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের স্থানীয় এমপির তোরণে আগুন দেয়। পরে উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলম ভূঁইয়ার অফিস ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ এগিয়ে আসলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের পিকআপভ্যানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, গত ৩০ মার্চ আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। পরে কাকুর অবস্থার অবনতি হলে গত ১৩ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে চলে যাই। এরপর ২ মে দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে এসে সারাক্ষণ কাকু শুধু এসব নিয়েই ভাবতেন। পুলিশ কেন আসামিদের ধরছে না বারবার তা জানতে চাইতেন তিনি। প্রধান আসামির সঙ্গে দুবাইয়ে অনেকেই যোগাযোগ ও তাকে সহায়তা করার কথা শুনে কাকুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তো। এসব খবর শোনে শিবপুর মাটি ও মানুষের নেতার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। এরপর কাকুর হৃদরোগ, প্রস্রাবে ইনফেকশন ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গত ৭ মে তাকে এভারকেয়ারে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৯ মে রাত ১০টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হলে ওই হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) নেওয়া হয়। এরপর তিনি আর চোখ মেলে তাকাননি। এরপর আজ বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
চেয়ারম্যানের স্বজনরা জানান,গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সড়কে নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান। ঘটনার পর তাকে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পিঠে বিদ্ধ দুটি গুলি বের করা হয়।
মামলার ঘটনার দুইদিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদী হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মো. মহসীন মিয়া (৪২), কামারগাও এলাকার ইরান মোল্লা (৩০), মুনসেফেরচর এলাকার শাকিল (৩৫), কামারগার এলাকার হুমায়ুন (৩২) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার গাড়ি চালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)।
শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব মো. মুহসিন নাজির বলেন, হারুনুর রশীদ খান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। একটা চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেভাবে একটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে হত্যা করেছে তার যেন একটা সঠিক বিচার হয়। সারাজীবন তিনি দলের (আ.লীগের) জন্য কাজ করে গেছেন, শেষ বয়সে তাকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে জীবন দিতে হলো। আমরা এর সর্বোচ্চ শাস্তি প্রকৃত দোষীদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে এজাহারনামীয় দুজন।
এজাহারনামীয়দের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আরেক এজাহারভুক্ত আসামি শাকিল কারাগারে রয়েছে। এজাহারনামীয় প্রধান আসামিসহ চারজন দুবাইয়ে অবস্থান করছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
জেএইচ