ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সাংবাদিক নাদিম হত্যা: বিআরইউর কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: বিআরইউর কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

বরিশাল: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমের ওপর হামলা ও তাকে হত্যার ঘটনায় জড়িতের শাস্তির দাবি করেছে বরিশাল রি‌পোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ)। নাদিমের মৃত্যুর ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি।

নাদিম হত্যার বিচার না হলে তীব্র আন্দোলন ও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বিআরইউ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক বিবৃতির মাধ্যমে শোক ও নিন্দা প্রকাশ এবং হুঁশিয়ারি দেয় বরিশালের সাংবাদিকদের এ সংগঠন।

বিআরইউর সভাপতি নজরুল বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মিথুন সাহা প্রকাশিত বিবৃতে বলা হয়েছে, সংবাদ প্রকাশের জেরে দুর্বৃত্তদের হামলায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমের মৃত্যুর ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানাচ্ছে বরিশাল রি‌পোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ)। সংগঠনের সব সদস্যও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

অনতিবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে। অন্যথায় তীব্র আন্দোলন ও কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।

নাদিমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে বিআরইউ।

সংগঠনের প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক রাসেল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার (১৪ জুন) অফিসের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ও তার সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু। পথে বকশিগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে সামনে থেকে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়।

এরপর দেশীয় অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনে হিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায় এবং তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।   সেসময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী মুজাহিদ ও স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

বুধবার রাত ১০টার দিকে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথের সামনে ঘটে যাওয়া ওই নৃশংস হামলার বর্ণনা দেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু।

তিনি বলেন, সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে নাদিমসহ আমরা কয়েকজন নিউজ করেছিলাম, তারপর থেকেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন আমাদের ওপর। পরে আমাদের নামে ডিজিটাল আইনে মামলাও করেন তিনি। সেই মামলা গতকাল ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল। এর দুই তিন ঘণ্টা পর রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাদিমের ওপর হামলা হয়।

তিনি আরও বলেন, নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর লোকজন। ঘটনার সময় ওই গলিতে অন্ধকারে আড়ালে দাঁড়িয়েছিলেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু।   সেসময় তার ছেলে ফয়সাল, রিফাত, রেজাউল, মনির, সাইদসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। মারধরের সময় আমি আটকাতে গেলে আমাকেও তারা মারধর করেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী চলে যায়। পরে নাদিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বেলা পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

গেল ১০ মে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে বাংলানিউজে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

পরে ১৪ মে তার স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ শিরোনামে বাংলানিউজে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।  

পরে ২০ মে  সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী মাহামুদুল আলম বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও বাংলানিউজে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।  

এর আগে গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরে নাদিমসহ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহামুদুল আলম বাবু। ১৪ জুন আদালত মামলাটি খারিজ করেন।

নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম তার (গোলাম রাব্বানী) ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই হামলা করে তাকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

এর আগেও জামালপুরে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমের ওপর হামলা হয়। ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার মধ্যবাজার এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

সেসময় স্থানীয়রা জানায়, পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরছিলেন সাংবাদিক নাদিম। পথে মধ্যবাজার এলাকায় পৌঁছালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনার সমর্থক যুবলীগ নেতা শামীম খন্দকার, স্বপন মণ্ডল, শেখ ফরিদের নেতৃত্বে কয়েকজন তার ওপর হামলা করে। হামলাকারীরা তাকে মারধর করে। এতে আহত হলে তাকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।  

সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ওই হামলা নিয়ে বলেন, রাজাকার ইস্যুসহ আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের নির্দেশে তার সমর্থক স্বপন, শেখ ফরিদ, শামীম আমার ওপর হামলা করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।