ঢাকা: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমের ওপর যখন সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় ঠিক তখন ঘটনাস্থলে হামলাকারীদের সঙ্গে প্রধান অভিযুক্ত সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই স্বীকার করেছেন জামালপুরের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু।
তার স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে নাদিম হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে রিফাতকে গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।
শনিবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ইতোমধ্যে রিফাতকে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এখন পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান বাবুর ছেলে রিফাতকে আমরা ট্রেস করতে পারিনি। বাবুও তার ছেলের অবস্থান বা অন্য বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তবে অভিযুক্ত আসামী বাবু স্বীকার করেছেন হামলার সময় তার ছেলে রিফাত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। হামলার ঘটনায় এখনো ২-১ জনকে এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা সদস্যরা কাজ করছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে র্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে।
শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু (৫০), ও তার সহযোগী মো. মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল (৩৫), জাকিরুল ইসলাম (৩১) ও মো. রেজাউল করিম (২৬) গ্রেপ্তার করে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪। গ্রেপ্তার আসাইমরা সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
খন্দকার কমান্ডার আল মঈন বলেন, হামলার সময় মূল অভিযুক্ত আসামি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ঘটনাস্থলের কাছাকাছি উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান বাবু।
র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মাহমুদুল আলম বাবু ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও ভুক্তভোগী সাংবাদিক নাদিমের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এই লক্ষ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী নাদিমের ওপর হামলা চালান বাবু। ঘটনার পর থেকে তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার রেজাউল, মনির এবং জাকির মাহমুদুল হাসান বাবুর সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সহযোগী। গ্রেফতার রেজাউল দৌড়ে গিয়ে নাদিমকে ধাক্কা দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। পরে ঘটনাস্থলেই বাবুর নির্দেশে তারা নাদিমকে বেদম প্রহার করতে থাকে। একপর্যায়ে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় তারা। ইতিপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
গত ১৪ জুন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলার শিকার হন এবং একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারীরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রাতেই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। ভুক্তভোগী নাদিমের অবস্থার অবনতি হলে ১৫ জুন সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিম মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী বাদী হয়ে ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলস বাবুকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
আরও পড়ুন:
নাদিম হত্যা: বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাত ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২৩
এসজেএ/পিএম/এমজেএফ