মাদারীপুর: রাজধানী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরবর্তী জেলার যাত্রীরা পদ্মা সেতু চালুর পর গত এক বছরে ঢাকা যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করছেন। সেতুর কারণে স্বল্প সময়ে রাজধানী পৌঁছাতে পারাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন যাত্রীরা।
দূরপাল্লার যাত্রীদের মতে, পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানী যেতে এখন নেই কোনো ভোগান্তি।
অন্যদিকে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকটা রয়েই গেছে। লোকাল বাস সার্ভিসে ঢাকা পৌঁছাতে সময় ব্যয় হয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। পথে পথে একাধিকবার বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা এবং গাদাগাদি করে যাত্রী বহনের কারণে এক প্রকার দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে তাদের। বিশেষ করে মাদারীপুর জেলার শিবচর, ফরিদপুরের সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা, শরিয়তপুরের জাজিরাসহ পদ্মা সেতুর কাছাকাছি এলাকার যাত্রীদের লোকাল বাস সার্ভিসেই যেতে হয় ঢাকায়। আর লোকাল বাসগুলোর বেশিরভাগই অনুন্নত এবং পথে পথে যাত্রী নিতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর মাওয়া প্রান্ত থেকে যে বাসগুলো ঢাকার গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী যেতো, সেই বাসগুলোই বর্তমানে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও কিছু বাস গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে গুলিস্তান এবং যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে ছাড়ে। এ বাসগুলোর বেশিরভাগই এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা, মালিগ্রাম, পুলিয়া, সূর্য্যনগর, পাঁচ্চর, পদ্মা সেতু সংলগ্ন নাওডোবা থেকে যাত্রী নিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়। এরপর ঢাকা পৌঁছাতে বিভিন্ন স্টপেজ থেকে যাত্রী ওঠানো হয়। এতে করে ঢাকা পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে সময় বেশি ব্যয় হয়। অনেক যাত্রীদের ধার্যের বাধ ভেঙে পড়ে। এছাড়া ভাড়াও গুণতে হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
এদিকে জেলা শহরগুলো থেকে যে বাস ছেড়ে আসে, সাধারণত পথে এরা যাত্রী ওঠায় না। মাদারীপুর শহর থেকে ছেড়ে আসা পরিবহনগুলো সরাসরি ঢাকা পৌঁছায়। এছাড়াও দূরবর্তী অন্যান্য জেলার পরিবহনগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করে। ফলে সেগুলোতে স্বাভাবিক সময়েই পৌঁছানো যায় রাজধানী ঢাকায়।
মো. সোহাগ নামে শিবচরের এক যাত্রী বলেন, আমরা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বাসে চড়ে ঢাকা যাই। স্বাধীন, প্রচেষ্টা, ইলিশ, আনন্দসহ যে বাসগুলো চলে সেগুলো সবই প্রায় লোকাল আর পথে থেমে থেমে যাত্রী ওঠানো হয়। সিট খালি না থাকলেও ঠেলাঠেলি করে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয় আর ধীরে ধীরে চলে। এ বাসগুলো সিটিং সার্ভিস হওয়া উচিত। সিট খালি না থাকলে কোথাও থামানো যাবে না এমন হলে আমরা চলাচল করে স্বস্তি পেতাম।
আরেক যাত্রী মো. আবু বকর বলেন, ভাঙ্গা থেকে ঢাকা সরাসরি ভালো মানের বাস সার্ভিস চালু করলে আমরা একটু প্রশান্তি পেতাম।
খুলনাগামী টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেসের যাত্রী নিলয় নামের এক যুবক বলেন, এখন ঢাকা যেতে কোনো টেনশন নাই। টিকিট কেটে বাসে চড়ে বসি, আর গাড়ি ছাড়লে খুব বেশি সময় লাগে না ঢাকা পৌঁছাতে। দূরপাল্লার বাসের সার্ভিসও ভালো। এসি/নন এসি সব গাড়িই আছে। পছন্দমতো যাওয়া যায়।
ভাঙ্গা-ঢাকা রুটের একাধিক বাসের চালক, সুপারভাইজার জানান, এ রুটে বিভিন্ন স্থানের যাত্রীদের বাসে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য একাধিক কাউন্টার তৈরি করেছেন স্থানীয়রা। ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের একাধিক স্ট্যান্ড থেকে যাত্রী নিতে হয়। তা না হলে যাত্রীরাও বিপাকে পড়বেন। এ কারণে একাধিক স্থানে বাস থামাতে হয়। আর দূরপাল্লার পরিবহনগুলো সরাসরি যাত্রী নিয়ে ঢাকা যায়। কোথাও থামতে হয় না। তাছাড়া ৫৫/৬০ কিলোমিটার দূরত্বে চেয়ারকোচ বাস হয় না। তবে আগামীতে বাসের সার্ভিস আরও ভালো হবে বলে আশা রাখি।
পদ্মা সেতু চালুর পর গত এক বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন এসেছে, তার সুবিধা ভোগ করছেন সবাই। পদ্মার পাড়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকা, সন্ধ্যার পর বা বৈরী আবহাওয়ায় নৌযান বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুর্ভোগ এবং ঈদে গাদাগাদি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিতে হয় না। সাধারণ যাত্রীরা এই সুবিধাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এর মধ্যে একটু আরামে যেতে স্বল্প দূরত্বেও ভালো বাস সার্ভিস প্রত্যাশা তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
এফআর