ঢাকা: দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থাপনার স্বার্থে প্রযুক্তির ব্যবহার, অর্থায়ন এবং পিপিপি’র সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেই দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব।
শনিবার (২৪ জুন) রাজধানীর রেডিসন হোটেলের বলরুমে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং সুপার প্রজক্টে কনসোরটিয়াম যৌথভাবে আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক জাতীয় সিম্পোজিয়ামে বক্তারা এ কথা বলেন।
সিম্পোজিয়ামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন। এছাড়াও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন যৌথভাবে ‘সুপার প্রজেক্ট কনসোরটিয়াম’ বাস্তবায়ন করছে, যার সহায়তায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিভিল প্রটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইড।
অনুষ্ঠানে প্রাইভেট সেক্টর ইমারজেন্সি অপরাশেন সেন্টারের (পিইওসি) ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয়, যেখানে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্চাসেবক দলের তথ্যাদি এবং অগ্নি নির্বাপনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও প্রাপ্তির বিভিন্ন তথ্য সমন্বিত করা হয়েছে।
সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, শিল্পখাত আমাদের অর্থনীতির প্রাণ, তাই অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে শিল্পের পাশাপাশি জনজীবনে যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও এর বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে প্রায় ৪০০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যারা যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে এবং সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ প্রদান ও ড্রিলের ওপর অধিক হারে মনোনিবেশ করা হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, জনজীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত ও বসতবাড়ি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফায়ার ড্রিল বাস্তবায়ন এবং বিশেষ করে ঢাকা শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ প্রতিরোধ বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সেবা সংযোগের ম্যাপিং খুবই জরুরি।
নিরাপদ ভবন নির্মাণ নিশ্চিতকল্পে বিল্ডিং কোড অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, জীবনের সাথে ঝুঁকি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, তাই যেকোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার ও বেসরকারিখাতের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ক্রমশই ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং সম্ভাবনাময় অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ, তাই শুধু ঢাকাতেই নয় বরং সমগ্র বাংলাদেশের ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও সক্ষমতা আনায়নের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
সিম্পোজিয়ামে ‘দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ফিন্যান্সিং স্ট্রাটেজি’ এবং ‘দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক ২টি প্যারালাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নির্ধারিত আলোচকরা বিষয়বস্তুর ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন। সিম্পোজিয়ামে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
জিসিজি/এমজেএফ