ঢাকা: ঈদুল আযহা আর মাত্র চারদিন বাকি। এরই মধ্যে ঢাকার সবগুলো অস্থায়ী পশুর হাটের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
এই হাটের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চার থেকে পাঁচদিন আগে থেকেই এই হাটে গরু নিয়ে আসা শুরু করেছে বেপারীরা। সব ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা ঠিকঠাক থাকলেও এই হাটের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে পরিষ্কার পানি ও টয়লেট ব্যবস্থার। ফলে গরু নিয়ে আসা ব্যপারীরা পড়ছে চরম ভোগান্তিতে।
শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে সরেজমিনে আফতাব নগর অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে এবং গরুর বেপারীদের সঙ্গে কথা বলে পানি এবং টয়লেটের দুর্ভোগের এমন চিত্র দেখা যায়।
বেপারীদের অভিযোগ, যথেষ্ট পরিমাণ পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা না থাকায় হাটে আনা গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে। যতটুকু পানির ব্যবস্থা আছে তাও অনেক দূরে দূরে। একই সঙ্গে দীর্ঘ লাইন ধরে এত দূর থেকে পানি এনে গরুগুলোকে গোসল করানো সহ পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে আশেপাশের পরিবেশ নোংরা হচ্ছে। আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য বেশির ভাগ গরুর পেট খারাপ বা ডায়রিয়া জনিত সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি টয়লেটের সু-ব্যবস্থা না থাকায় গরু নিয়ে আসা বেপারীরা পড়ছে চরম ভোগান্তিতে।
আফতাব নগর ভ্রাম্যমাণ পশুর হাটের তালতলা নামক স্থানে বেপারীদের জন্য তৈরি করা একটি টয়লেট সরেজমিনে দেখা যায়, হাটের একপাশে খোলা যায়গায় বাশ এবং পাটের ছালা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এখানে নেই কোনো পানির ব্যবস্থা, পরিবেশও নোংরা এবং টয়লের ব্যবহার ও ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা আছে।
গরুর বেপারি বকুল প্রামাণিক পাবনার আতাইকুলা থানা থেকে ৮টা গরু নিয়ে আফতাব নগর হাটে এসেছেন। সঙ্গে আরও চার জন এসেছেন। পাবনা থেকে শুক্রবার (২৩ জুন) রাতে রওনা দিয়ে শনিবার (২৪ জুন) ভোর সকালে আফতাব নগর গরুর হাটে এসে পৌঁছান। এর আগে তিনি আরও একবার আফতাব নগর হাটে গরু নিয়ে এসেছিলেন। হাটে আসার পর থেকে বেশ কিছু ভোগান্তিতে তিনি পড়েছেন। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে গবাদিপশুর খাবার জন্য পরিষ্কার পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা।
হাটের ব্যবস্থাপনা কেমন মনে হচ্ছে জানতে চাইলে বেপারী বকুল প্রামাণিক বাংলানিউজকে বলেন, হাটের পরিবেশ ভালোই। শুধু সমস্যা হচ্ছে গরুগুলোকে ভালো খাবার পানি দিতে পারতেছি না। আশেপাশের ডোবা থেকে পানি এনে গরুগুলোকে দিতে হচ্ছে। এই ঘোলা পানি খেলে গরুগুলোর স্বাস্থ্যের সমস্যা হতে পারে। অনেকটা দূরে একটা পানির কল আছে কিন্তু সেখানে লম্বা লাইন লেগে থাকে। তাই কষ্ট হলেও এত দূর থেকে পানি নিয়ে আসছি। আমাদের জন্য যদি ভালো পরিষ্কার পানি এবং টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ভালো হবে।
মো আজাহার আলী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানা মানিকের চর গ্রাম থেকে ১৭টা গরু নিয়ে বুধবার (২১ জুন) দুপুর ৩ টায় আসেন আফতাব নগর হাটে। তিনদিন যাবত হাটে গরুগুলোর সঙ্গে রাত দিন থাকছেন। পরিষ্কার পানি এবং টয়লেটের সমস্যায় পড়েছেন তিনিও। কথা হলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, এত বড় একটা হাট পানির যদি এত অল্প ব্যবস্থা থাকে তাহলে তো সমস্যা। এমনেতেই গরু দিনে প্রচুর পানি খায়। তারপর এতটা পথ ট্রাকে জার্নি করে গরুগুলো ক্লান্ত থাকে। এখন ভালো করে পানি খাওয়াতে না পারলে গরু গুলোর স্বাস্থ্যের সমস্যা হবে।
তিনি বলেন, আমরা গরুর রেখেছি আফতাব নগর হাটের একদম শেষ প্রান্তে। এখানে পানির কল শুধুমাত্র একটি। সেখানে পানি আনতে লম্বা লাইন লেগে থাকে। তার ওপর রাতের বেলায় পর্যন্ত আলো না থাকায় কাস্টমার আসলেও ভাল করে গরু দেখাতে পারি না।
টয়লেট এর ব্যবস্থা কি? প্রয়োজন হলে কোথায় যান জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে টয়লেটের সমস্যা। একটু সামনে বাঁশের একটা টয়লেট করে দিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অবস্থা খুবই খারাপ, নোংরা পরিবেশ। তাই সেখানে যাওয়া হয় না। আশেপাশের ঘাস বনে চলে যাই টয়লেট করতে।
এ বিষয়ে আফতাব নগর হাটের ইজারাদার এম এ মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা পুরো হাটে মোট ৫০টি পানির কলের ব্যবস্থা করেছি। গতকাল পর্যন্ত আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ভলান্টিয়ার ছিল না। যে কারণে চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে এতদিন কলগুলো লাগানো হয়নি। আজকে সকাল থেকে পানির কল গুলো লাগানো হয়েছে। আশা করছি আজকের পর থেকে পানির তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
গরুর বেপারীদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেটের সু ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে এই ইজারাদার বলেন, যেকোনো জায়গায় যত্রতত্র টয়লেট স্থাপন করা যায় না। টয়লেটের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকে। যেহেতু হাটের পরিধি অনেক বড় তাই টয়লেটের একটু সমস্যা থাকে। এখানে রিং বসিয়ে টয়লেট বানানোর সম্ভব না। তাই বাঁশ ও পাটের মালা দিয়ে টয়লেট বানানো হয়েছে। আর এবার সিটি কর্পোরেশন থেকে ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা না করায় এসমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি কোথায় টয়লেট এই ধরনের নির্দেশনা বা সাইনবোর্ড না থাকায় বেপারীরা সমস্যায় পড়ছে। এ নির্দেশ বা সাইনবোর্ড গুলো লাগানোর ব্যবস্থা করছি। তাহলে আর সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
ইএসএস/এসএম