ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বায়ুদূষণ রোধে ক্যাপসের ৫ সুপারিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৩
বায়ুদূষণ রোধে ক্যাপসের ৫ সুপারিশ

ঢাকা: দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের ফলে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা ও বায়ুদূষণ বাড়ছে। তাই বায়ূদূষণ রোধে ক্লিন এনার্জি বা নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোসহ পাঁচটি সুপারিশ জানিয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

শনিবার (৫ আগস্ট) বায়ুমান উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি সরকারের প্রতি এসব সুপারিশ জানায়।  

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ক্যাপস, বারসিক ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনটির সহ-আয়োজক ছিল পরিবেশ উদ্যোগ, ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) এবং সেন্টার ফর ল' অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সিএলপিএ)।

বায়ুদূষণ রোধে ক্যাপসের সুপারিশগুলো হলো-

১। ভবিষ্যতে বায়ু দূষণের মারাত্মক প্রভাব কমানোর জন্য নতুন প্রণীত বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ এ কমপক্ষে পূর্ববর্তী মান প্রতিঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম বজায় রাখা। এটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর বায়ু দূষণের নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমাতে সহায়তা করবে।

২। তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে সহযোগিতা প্রদানকারী দেশগুলো নিজ দেশে যেভাবে ইমিশনের মানমাত্রা মেনে চলে, একইভাবে বাংলাদেশেও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইমিশনের মান মাত্রা বজায় রাখা। বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ এ নির্গমন মানমাত্রাগুলোকে আরও শক্তিশালী করা এবং আগত আইইপিএমপিতে স্ট্যাক ইমিশনের মানমাত্রাগুলোকে পুনঃবিবেচনা করা এবং অন্তর্ভুক্ত করা।

৩। পরিবেশ অধিদপ্তর এরই মধ্যেই ২০২৩ সালের মধ্যে ডিজেলের সালফারের উপস্থিতির সর্বোচ্চ সীমা ৫০ পিপিএম নির্ধারণের জন্য একটি রোড ম্যাপ তৈরি করেছে এবং ২০১৯ সালে হাইকোর্টের ১১৬/২০১৯ রিট পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ওই বছরের ২৬ নভেম্বর ‘বায়ু দূষণ রোধ নির্দেশিকা’ নামক একটি চমৎকার গাইডলাইন প্রণয়ন করেছে। ওই নির্দেশিকার ১৬ নং পৃষ্ঠার ১৯ নং ক্রমে ‘কম সালফারযুক্ত (৫০ পিপিএম) ডিজেল আমদানি ও ব্যবহার নিশ্চিত করার’ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেটি পুনরায় বজায় রাখা। যদি এ নির্দেশিকায় বর্ণিত নীতিমালা বাস্তবায়ন করা যায় তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে পাশাপাশি বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার প্রধানন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে।

৪। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এ সব কয়লা, তেল ও গ্যাস ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্টকে পূর্বের মতো (পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭) লাল শ্রেণিভুক্ত রাখা। শিল্পের আকার দিয়ে নয় শিল্পের ধরণ অনুযায়ী প্রতিটি শিল্প কারখানার জন্য স্বচ্ছ ইআইএ, ইএমপি ব্যবস্থা করা।

৫। প্রধানমন্ত্রীর কপ-২৬ এর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি বা নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ক্যাপসের মতে ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি বা নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশের বায়ুমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রদত্ত গাইডলাইন অনুযায়ী হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বায়ুমান এবং জ্বালানি উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জ্বালানি চাহিদা পূরণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি বায়ুমানের ব্যাপক অবনতির কারণ হতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বাড়ানো এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করলে পারলে দেশের বায়ুমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রদত্ত গাইডলাইন অনুযায়ী হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, বায়ুদূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এখন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ভারী ধাতু মানব দেহের রক্তে মিশে যাচ্ছে। জৈব জ্বালানির দহনে বায়ুতে বিভিন্ন প্রকার‍ দূষক নির্গত হয়, যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্রেডার উচিত নবায়নযোগ্য শক্তিকে আরও বেশি প্রসারিত করা।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের আরবান প্রোগ্রাম এর টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর ডমিনিক সেন্টু গমেজ বলেন, নির্মল বায়ুতে বেঁচে থাকা সব মানুষেরই অধিকার, যা নিশ্চিত করা সরকারের একটি অন্যতম দায়িত্ব এবং তা না হলে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে আমাদের দেশে বিশেষ করে বড় বড় শহরাঞ্চল বা মেগা সিটিগুলোতে বিশুদ্ধ বা নির্মল বায়ুর অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষত্রে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও অর্থনীতির চাকার অচল রাখতে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

বারসিক এর সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরের বায়ুর মান ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য শুধু ক্যাপসের মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠান নয়, এক্ষেত্রে যুব সমাজের পাশাপাশি অন্যান্যদের ও এগিয়ে আসতে হবে। বায়ু দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে দূষণ দমনের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সবার জন্য বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলার জন্য জলাভূমি পুনরুদ্ধার, নগর বনায়ন বৃদ্ধি করতে হবে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার বলেন, লোডশেডিং বা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে যেমন কেউ চায় না, তেমনি নিঃশ্বাসটাও নিতে চাই নির্মল বাতাসে। আর এ দুটোই একসঙ্গে সম্ভব নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমেই কারণ সূর্যটা অফুরন্ত।

সিএলপিএ এর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে। এমতাবস্থায় বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জনস্বাস্থ্য ও দেশের উন্নয়নের জন্য জরুরি, এর জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি নিশ্চিত অপরিহার্য। স্বল্প মেয়াদে নগর কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উচিত নির্মাণ কাজের দূষণ বন্ধ করা, যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ বান্ধব গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা।

এ সময় ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) এর সদস্য সচিব মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, পরিবেশ উদ্যোগ এর গবেষণা সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী, বারসিক এর প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুজ্জামান সাগর, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিইডি) এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব, ক্যাপসের গবেষক ইঞ্জিনিয়ার মারজিয়াত রহমান এবং সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ এর প্রধান সমন্বয়ক নয়ন সরকার উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।