ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৩০ মে ২০২৪, ২১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

দিনে ডাবের ব্যবসা রাতে ছিনতাই ছিল রিপনের পেশা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
দিনে ডাবের ব্যবসা রাতে ছিনতাই ছিল রিপনের পেশা 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: দিনে করতেন ডাবের ব্যবসা আর রাত হলেই নেমে পড়তেন চোরাচালান ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাণ্ডে। এসব অপকর্ম কিশোর গ্যাংও গড়ে তুলেছেন তিনি।

এই ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের মো. নাহিদ আহমেদ রিপনের (২০) পেশা। জেলার শিবগঞ্জের কানসাটের সদাশিবপুর গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে তিনি।

গত ৭ আগস্ট এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে দেড় লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় র‌্যাবের ছায়াতদন্ত ও অভিযানের পর এমন লোমহর্ষক তথ্য উঠে এসেছে।  

ঘটনাটি ঘটে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট এলাকার।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) গভীর রাতে কানসাট এলাকায় র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে কানসাট কিশোর গ্যাং লিডার নাহিদ আহমেদ রিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

স্থানীয় ও র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, রিপন একজন নামধারী ডাব ব্যবসায়ী। রাত হলেই রিপনের আসল মুখোশ বের হয়। গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তার মুখে মাস্কপরা থাকে।  

রিপনের টার্গেটে থাকে বিকাশ, গরু, আমসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের। আর তার গ্যাংয়ের ৪/৫ জন কিশোর কেউ তথ্য দিয়ে আবার কেউ অভিযানে যুক্ত থেকে সহায়তা করে।

সম্প্রতি গভীর রাতে বাড়ি যাওয়ার পথে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে শ্যামপুর চামাবাজারের বিকাশ ব্যবসায়ী সেতাউর থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া এবং বারোসা মাদরাসা মাঠের সামনে ককটেল ফাটিয়ে বিকাশ ব্যবসায়ীর মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এসব কাণ্ড রিপন ও তার গ্যাং ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ।

সাবেক শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান ভোদন জানান , এক ডাব ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিলে তিনিসহ গ্রামের মোড়লের সহায়তায় বিষয়টি সমাধান করেন। এর কয়েকদিন পর রিপন নিজেই ডাব ব্যবসায়ীর ভ্যানে হেরোইন মাদক রেখে র‌্যাবকে তথ্য দেয়। র‌্যাব হেরোইনসহ ওই ডাব ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ মফিজ উদ্দীন জানান, পুলিশে চাকরি পাওয়া বাজিতপুর চৌধুরী পাড়া এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে নাইমের কাছ থেকে টাকা চায় রিপন। নাইম সেটা না দিলে তৎকালীন এক পুলিশ কর্মকর্তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি অস্ত্র মামলায় আসামি করে নাইমকে। পরে বিষয়টি পুলিশ সুপারের নজরে আনা হলে সেই মামলা থেকে পুলিশ নাঈমকে অব্যাহতি দেয়। এছাড়াও গত ঈদের রাতে উমরপুর গ্রামের কালু নামের এক ব্যক্তিকে গাছের সঙ্গে উলঙ্গ অবস্থায় বেঁধে রেখে তার কাছ থেকে একটি চার্জারভ্যান গাড়ি এবং নগদ কিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় রিপনের নেতৃত্বে ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

সবশেষ গত ৭ আগস্ট গভীর রাতে বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোড দোকানি রাজু বাড়ি ফেরার পথে রিপন ও তার দল তার চোখ বেঁধে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।  

এ ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কিশোর গ্যাং নিয়ে তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ শুরু হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‌্যাব ক্যাম্প থেকে ছায়াতদন্ত করা হয়। গত ৮ আগস্ট কিশোর গ্যাং সদস্য সিজু (১৯) কে শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মূলহোতা রিপনসহ ওই গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যদের নাম উঠে আসে। পরে পুলিশকে নিয়ে র‌্যাব ১০ আগস্ট রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কিশোর গ্যাং লিডার রিপনকে গ্রেপ্তার করে।

এর আগে আহত রাজুর বাবা অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরি জোবায়ের হোসেন রিপনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, র‌্যাব ও পুলিশের অভিযান শেষে রিপনকে দায়েরকৃত মামলার আসামি দেখিয়ে শিবগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।