ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কোটি টাকার সড়কে সামান্য বৃষ্টিতেই খানাখন্দ, দুর্ভোগ যাত্রীদের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
কোটি টাকার সড়কে সামান্য বৃষ্টিতেই খানাখন্দ, দুর্ভোগ যাত্রীদের খানাখন্দে ভরা সড়ক

মাদারীপুর: মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের ৭ কিলোমিটার পথ দুইলেন থেকে চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। তবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে গর্ত, খানাখন্দ।

উঠে গেছে সড়কের পিচ। আধুনিক এই সড়ক নির্মাণের পরে মেরামত করা হয়েছে কয়েক ধাপে। তবুও সামান্য বৃষ্টি হলেই খানাখন্দ আর গর্ত তৈরি হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের।  

জানা গেছে, মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক ৭ কিলোমিটার দুইলেন থেকে চারলেনে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। ৭৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলার মোস্তফাপুর থেকে ডিসি ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত সড়কের কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। এরপর ২০২০-২১ অর্থ বছরে নওগাঁ জেলার স্টেডিয়ামপাড়া এলাকার আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জরুরিভাবে মেরামতে ব্যয় করা হয় ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু হালকা বৃষ্টিতেই দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্ত। পরে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ঢাকার বনানী এলাকার ওটিবিএল ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একই সড়ক মেরামতে সাড়ে ৪ কোটি টাকা খরচ করে সওজ। অথচ মেরামতের পরও একই চিত্র সড়কের। রয়েছে গর্ত, উঠে গেছে পিচ। বৃষ্টি নামলেই খানাখন্দে জমে থাকছে পানি। দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা।

দেখা গেছে, মাদারীপুর সরকারি কলেজ গেট, থানার মোড়, স্টেডিয়াম গেট, ইটেরপুল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, নতুন বাসস্ট্যান্ড, খাগদীসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কটির পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। নিয়মিত সড়ক ব্যবহারকারী যাত্রী-চালক ও এলাকাবাসীর প্রশ্ন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সড়ক। বছর বছর সংস্কারের নামে ব্যয় করা হয় লাখ লাখ টাকা। তবুও কেন সড়ক বেশি দিন টিকছে না? সামান্য বৃষ্টিতেই তৈরি হচ্ছে খানাখন্দ?'

এই সড়ক ব্যবহারকারী পরিবহন চালকরা বলেন, মাদারীপুর শহর থেকে মোস্তফাপুরের চারলেন সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। গাড়ি চালাতেও সমস্যায় পড়তে হয়। বৃষ্টিতে গর্তে জমে থাকে পানি। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে চলাচল।

সাধারণ যাত্রীরা জানান, সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটাচলা করা যায় না। সড়কের গর্তে পানি জমে থাকে, যানবাহন গেলে সেই পানি ছিটে লাগে শরীরে। বেশ দুর্ভোগ হয়। নতুন সড়কের এই অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর প্রতিকার দরকার।

মাদারীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এনায়েত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, নতুন সড়ক সংস্কারের নামে প্রতিবছর কোটি টাকা খরচ করা হয়। এই টাকা কোথায় যায়? ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা এর জন্য দায়ী। ফলে জনগণের দুর্ভোগ কমছে না।

মাদারীপুর জেলা সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা আকন্দ বলেন, দুইদিন পর পরই দেখি সড়ক মেরামত করে। একটু বৃষ্টি হলেই আবারও একই চিত্র। এর দায় সওজ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

মাদারীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোতাহার হোসেন জানান, একদিকে ভারী যানবাহন চলাচল বেড়েছে, অন্যদিকে প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে সড়কের বিভিন্নস্থানে কিছু গর্ত হয়েছে। যা মেরামতের জন্য সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করার পর বেঁধে দেওয়া পরবর্তী সময়ের মধ্যে আবারো খানাখন্দ সৃষ্টি হলে নিজ উদ্যোগে সংস্কার করে দেবে, এজন্য সড়ক বিভাগ থেকে আলাদা কোনো টাকা দেওয়া হবে না। চলতি মৌসুমের বৃষ্টিতে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, এটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেবে। আমরা অলরেডি বলে দিয়েছি।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, 'সড়ক ও জনপদ বিভাগ কত টাকা ব্যয়ে সড়ক মেরামত করছে সেই ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। আর জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে কার্যকর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। কারণ সরকারের টাকা মানে জনগণের টাকা, এই টাকা অপচয়ের কোনো সুযোগ নেই। কারো কোনো গাফিলতি থাকলে প্রয়োজনে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।