ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খামারির তালিকা নিয়ে ধোঁয়াশা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৩
খামারির তালিকা নিয়ে ধোঁয়াশা 

নীলফামারী: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে করোনা মহামারিতে প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।  

অভিযোগ রয়েছে, খামারি না হয়েও ভাগ বাটোয়ারার শর্তে স্থানীয় দালাল ও এলএসপির (লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার) মাধ্যমে অনেকে তালিকাভুক্ত হয়ে করোনাকালীন অনেক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত খামারি টাকা না পেলেও টাকা পেয়েছেন অনেক অখামারী, ওষুধের দোকানদার, প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, জুয়ারি ও রাজনৈতিক নেতা।

 

এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ভুয়া তালিকা দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আসা টাকা তুলে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন।

এসব বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল আজীজের কাছে তথ্য চাইতে গেলে তিনি প্রথমে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। ২০২৩ সালের ৩ মে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বরাবর তথ্য চেয়ে আবেদন করে নির্ধারিত সময়ের পরে কোনো ধরনের তথ্য না পাওয়ায় চলতি বছরের ১১ জুন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোনাক্কা আলীর কাছে তথ্য চেয়ে আপিল করা হয়। আপিল করার পরও কোনো উত্তর না পেয়ে গত ১১ জুলাই প্রধান তথ্য কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তালিকাভুক্ত খামারি ও প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে সরকারিভাবে তিনটি প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তায় এলডিডিপি প্রকল্প, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্প ও প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও টেকসই প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্প চালু হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে বর্তমানে শুধুমাত্র এলডিডিপি প্রকল্পের খামারিদের প্রশিক্ষণ চলছে। অন্য দুই প্রকল্প কাগজে কলমে বাস্তবায়নাধীন থাকলেও বাস্তবে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। অভিযোগ রয়েছে, খামারিদের প্রশিক্ষণে মূল খামারিরা অংশ না নেওয়ায় বদলি প্রশিক্ষণার্থী দিয়ে কিংবা ভুয়া প্রশিক্ষণার্থীর তালিকা জমা দিয়ে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (এলইও, এলডিডিপি প্রকল্প) ডা. আল ফারুক বলেন, করোনাকালে এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় তিনটি ক্যাটাগরিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত খামারিদের তালিকা প্রস্তুত করে পাঠানো হয়। মাঠপর্যায়ে কর্মরত এলএসপিরা এলাকাভিত্তিক খামারিদের তালিকা প্রস্তুত করেন। যারা কমিটিতে থাকেন, তারাই ফাইনাল তালিকা পাঠিয়ে দেন। পরে খামারিদের কাছে প্রণোদনার অর্থ চলে যায়। আমি এ উপজেলায় এসেছি তিন মাস হলো। আমি এগুলোর বিষয়ে কিছু জানি না।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে আনুমানিক দুই হাজার খামারির তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত এক হাজার থেকে ১২০০ খামারির মোবাইল ফোনে টাকা এসেছে। খামারির তালিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা একেকজন নিজেদের ২০ থেকে ৫০টি করে ভুয়া মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন। এজন্য সাংবাদিকদের তালিকা দিতে তারা ভয় পান। এমনকি সাংবাদিকদের খামারিদের তালিকাসহ তথ্য দিলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে পারে, সেজন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে তথ্য দিতে না করা হয়েছে।  

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল আজিজ বলেন, এলডিডিপি প্রকল্পসহ সব প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।