ঢাকা, রবিবার, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ড. ইউনূস ও নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ১৭৫ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
ড. ইউনূস ও নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ১৭৫ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি

শান্তিতে নোবেলজয়ী, বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর ‘নিপীড়ন বন্ধের’ আহ্বান জানিয়েছেন ১০৪ নোবেলজয়ীসহ ১৭৫ বিশ্বনেতা।  

সোমবার (২৮ আগস্ট) ‘প্রটেক্ট ইউনূস’ শিরোনামের একটি সাইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি লেখা ওই খোলা চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।

 

চিঠিতে বলা হয়, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ওপর ব্যাপক আক্রমণের অংশ হিসেব বাংলাদেশ সরকার গত ১৩ বছর ধরে মুহাম্মদ ইউনূসকে নিপীড়ন করে আসছে। চিঠিতে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানও জানা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা আপনাকে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের নেতা এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনার জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে, আমরা তার প্রশংসা করি।

সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যে হুমকি দেখেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনী প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা মানবাধিকারের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের জন্য যে হুমকিটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন তা হলো নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন যে সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি।

এই চিঠিটি ৪০ জন বিশ্বনেতার দ্বারা আপনার কাছে আগের আবেদনের ওপর ভিত্তি করে লেখার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা ডক্টর ইউনূসের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। আমরা সসম্মানে অনুরোধ করছি, আপনি যত শিগগির সম্ভব অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ করুন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞসহ আপনার দেশের নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করা হোক। আমরা নিশ্চিত তার (ইউনূস) বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করলে তাকে খালাস দেওয়া হবে।

আপনি জানেন, অধ্যাপক ইউনূসের কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক। কীভাবে সামাজিক ব্যবসা আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হতে পারে, যার ফলে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ হয়। সাম্প্রতিক দশকগুলোয় বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন তার একটি প্রধান উদাহরণ তিনি। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি, তিনি নিপীড়ন বা হয়রানি মুক্ত হয়ে তার কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।

আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি নিরপেক্ষ এবং ন্যায্য পদ্ধতিতে নিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি আসন্ন মাসগুলোতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সমস্ত মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করবেন ৷ সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এ বিষয়গুলো সমাধান করা হয়, তা ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখতে আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের সঙ্গে শামিল হবো।

উল্লেখ্য, আগামী ৩১ আগস্ট থেকে পুনরায় ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার বিচারিক কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সোমবারও তার বিরুদ্ধে নতুন করে ১৮টি মামলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৭ আগস্ট ড. ইউনূসের নামে একটি চিঠিটি পাঠান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। রোববার (২৭ আগস্ট) চিঠিটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে লোকেদের তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়কে দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তির উপায় বের করার মাধ্যমে জনগণকে ক্ষমতায়নের জন্য আপনার প্রচেষ্টা দ্বারা আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। ২০০৯ সালে হোয়াইট হাউজে আপনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে আমি বলেছিলাম, আপনার কাজ লাখ লাখ মানুষকে তাদের নিজস্ব সম্ভাবনা কল্পনা করতে অনুপ্রাণিত করেছে।

এ সময় তিনি ইউনূসের গলায় নিজহাতে তার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ পরিয়ে দেওয়ার কথা স্মরণ করেন।

ওবামা আরও লিখেছেন, আমি আশা করি এটি আপনাকে জানার শক্তি দেবে, আপনি যাদের সম্ভাবনায় বিনিয়োগ করেছেন ও আমরা যারা সবার জন্য আরও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের বিষয়ে চিন্তা করি, তারা আপনার সম্পর্কে ভাবছেন। আমি আশা করি, আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার স্বাধীনতা অব্যাহত থাকবে।

এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি লিখেছিলেন রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ জন বিশ্বনেতা। তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়রের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।