ঢাকা: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের খোলা চিঠির বিষয়ে সরকার বিচলিত নয়। আর এ ইস্যুতে সরকার চিন্তিত বা কোনো চাপেও নেই।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
‘কোরিয়া-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা: উন্নয়ন অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সুযোগ অনুসন্ধান’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকার কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের দূতাবাস, কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (কোটরা) ও কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেবিসিসিআই)।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুক্তবাকের বিশ্বে যেকোনো অবস্থান থেকে যে কেউ কিছু বলতে পারেন। যেভাবে বলি না কেন, এখানে সরকারের কোনো প্রভাব ছিল না, ভবিষ্যতেও থাকবে না। বাংলাদেশের বিচারবিভাগ স্বাধীন। স্বাধীন বিচারবিভাগ যেটা মনে করেন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাই করেন। বিচারবিভাগ সিদ্ধান্ত নেবে এবং বিচার চলবে। আমরা এটা নিয়ে বিচলিত বা এটা নিয়ে চিন্তিত বা চাপ…।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি মনে করি না যারা এই আবেদনে শামিল হচ্ছেন তারা তাদের খ্যাতির প্রতি ন্যায়বিচার করেছেন। একটা বিচারকে তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু একজন ব্যক্তি যিনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, যিনি শত শত হাজার মানুষকে নিয়োগ করেছেন; যার সম্পদ আছে তার তো একটা লিগ্যাল ইস্যু থাকতে পারে। তার মানে এই না তিনি অপরাধী হয়েই যাবে আর সেটা অনুসন্ধান করাই যাবে না।
শাহরিয়ার আলম বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি কী আছেন যার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা তদন্ত করা যাবে না বা আদালতে নেওয়া যাবে না? এটা হতাশাজনক যে, একজনকে অব্যাহতভাবে প্রটোকল দেওয়ার জন্য…কিন্তু আমরা বুঝতে পারি।
তিনি বলেন, অতীতেও কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক মর্যাদা শুধু তার গুণের কারণে হয়েছে, তা নয়। এর পেছনে অনেক বিনিয়োগ আছে। আমি ওদিকে যেতে চাই না। আর এটা সরকারের বক্তব্য নয়, আমার নিজের বক্তব্য।
আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ড. ইউনূসের দূরত্ব কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার আলম বলেন, আপনারা ১/১১ ঘটনা প্রবাহ জানেন। তারপরে গত ১৫ থেকে ১৭ বছরের আমাদের দিক থেকে কিছু নেই। কিন্তু আমরা যেটা দেখেছি, সেটার প্রতিফলন আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে। যেখানে দুই পাতা ভাড়া করতে অন্ততঃপক্ষে মিলিয়ন ডলার লাগে। সেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে একটা পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মতো স্বাক্ষর নেওয়া হয়, যে স্বাক্ষরের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি বা তার লোকজন এখনও অর্থ বিনিয়োগ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু এ মামলার সঙ্গে ওটার কোনো সম্পর্ক নেই।
ড. ইউনূস ইস্যুতে বিদেশি বন্ধুদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সঠিক তথ্য সরবরাহ করব। অতীতেও আমরা করেছি। এখনও আমাদের দূতাবাসগুলো করে যাচ্ছে। আমরা তাদের কাছে এটার যতটুকু জানি তুলে ধরব।
তিনি বলেন, একটা বিচারাধীন বিষয়ে সরকার বা আমাদের দূতাবাস বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন করে ব্যাখ্যা বা বলার কিছু নেই। কারণ আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। আমরা তাদের এ অনুরোধটুকু করব, বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। চিন্তার কোনো কারণ নেই।
উল্লেখ্য, নোবেলজয়ী ইউনূসকে দণ্ড দেওয়া হতে পারে—এ আশঙ্কায় ১০০ জনেরও বেশি নোবেল পুরস্কারজয়ীসহ ১৭৫ জন বিশ্বনেতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
টিআর/এএটি