ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাথরঘাটায় ‘ভূত আতঙ্ক’ নিয়ে ধুম্রজাল

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
পাথরঘাটায় ‘ভূত আতঙ্ক’ নিয়ে ধুম্রজাল প্রতীকী ছবি

পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটায় একটি গ্রামে ভূত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়।

আতঙ্কের পাশাপাশি মানসিক বিপর্যস্তের মধ্যে পড়েছেন অনেকে।  

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ভাইরাল হয়।

ভূত আতঙ্ক নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এক পক্ষ বলছে, ভূত বা শয়তানের আখরা রয়েছে এলাকায়, অন্য পক্ষ বলছে এলাকায় কোনো ভূত নেই, স্থানীয় মাদক ও চুরির কৌশল করতেই এই অপপ্রচার।   অপরদিকে ভূতকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য তৈরি হলেও এখন স্থানীয়রা পড়েছে কতিপয় সাংবাদিক ও পুলিশের মুখোমুখি।

বিষয়টিকে জিন-শয়তানের কর্ম বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন মুন্সি। তবে ভূতের ভয়ে এলাকাবাসী পালিয়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

জাকির হোসেন মুন্সি বলেন, পবিত্র কোরআনে জিন এবং ইনছানের কথা রয়েছে। শয়তানের ওয়াসওয়াসার কারণে মানুষ অনেক সময় খারাপ কাজে ধাবিত হয়। আমাদের বাড়ির মধ্যে শয়তানের আছরে প্রায় ৭ বছর আগে কদভানু নামে একজন নারী মারা যান। রাতে স্বামীর সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল, সকালে বাড়ির পাশে পুকুরে তার লাশ পাওয়া যায়। এভাবে আমাদের বাড়ির মধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে রাতের আঁধারে মারধর করেছে এমনকি গভীর রাতে নাম বলেও ডাকে।

তিনি আরও বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশনে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে এলাকায় ভূতের ভয়ে মানুষশুন্য তা সঠিক নয়। ওই সংবাদের কারণে দূর-দূরান্তের আত্মীয় স্বজন এবং পরিচিতরা আমাদের গ্রামের প্রতি ভিন্ন মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাড়ির এক নারী বলেন, কয়েকদিন আগে ভারী বৃষ্টির সময় রাতে প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে যাই। এ সময় হঠাৎ শুকনো মাটির গুড়া আমার গায়ে ফেলে কেউ। যেখানে ভারী বৃষ্টি ছিল কয়েকদিন ধরে সেখানে শুকনো মাটি কীভাবে আসবে? 

ওই বাড়ির আরেক বাসিন্দা বাদল মুন্সি বলেন, ২৫ বছর আগের কথা। আমাদের বাড়ির সবাই বেড়াতে গিয়েছিল। আমি ও বাবা বাড়িতে ছিলাম। রাত তখন প্রায় ২টা হঠাৎ আমার বাবার দুইটা চিৎকার দেওয়ার শব্দ পাই। এ সময় কয়েকটি আছারের শব্দ পাই। কিছুক্ষণ পর বাবার রুমে এসে দেখি তিনি আর জীবিত নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাকে কয়েকবার ভয়ভীতি দেখিয়েছে।

এদিকে গ্রামে ভূতে আক্রমণ বিষয়টি লোকমুখে প্রচারিত গুজব বা মনগড়া বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার। ভূত আতঙ্কে গ্রামবাসীর অন্যত্র চলে যাওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয় বলে জানালেন তিনি।  

ওসি বলেন, আমরা একটি টিভি চ্যানেলে ভূত আতঙ্কে বাড়ি তালা দিয়ে অন্যত্র চলে গেছে এমন খবর দেখি। এরপর ওই এলাকায় যাই। সেখানের ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ  যারা ভূত আছে বলে বক্তব্য দিয়েছেন ওই প্রতিবেদনে তাদের সঙ্গে কথা বলি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা মনগড়া। সাধারণত গ্রামে রাতে একা হাঁটলে ভয় হয়, কিন্তু ভূত এটা সঠিক নয়।

তাছাড়া ভূত আতঙ্কে মানুষ এলাকা ছাড়া হয়েছে এমন তথ্যও সঠিক নয় বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।  তিনি বলেন, তবুও আমরা তাৎক্ষণিক পুলিশের টহল জোরদার করেছি। আতঙ্ক না হতে সকলের কাছে আহ্বান জানিয়েছি।

পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ভাই প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা আ. রাজ্জাক বলেন, ভূত বলতে কিছু নেই। একটা সময় মানুষের মাঝে ভূতের একটি ভয় বা আতঙ্ক কাজ করতো। জিন,শয়তান আছে এটা তো কোরআনেই রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।