মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচরের বিলপদ্মা নদীতে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নদীজুড়ে এ বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
নৌকাবাইচ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে ভিড় করে নদীর দু’পাড়ে। ডিঙি নৌকা এবং ট্রলারে করে অবস্থায় নেয় নদীতে। বিশাল এই নৌকাবাইচ দেখতে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন লাখো দর্শনার্থী।
উপজেলার শেখপুর এলাকার এই নৌকাবাইচ উপলক্ষে ওই এলাকার ঘরে ঘরে আত্মীয়-স্বজনদের মেলা বসে। বাইচ দেখতে দূরের আত্মীয়-স্বজনেরা একদিন আগেই এসে ওঠেন আত্মীয়ের বাড়িতে। সব মিলিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই বাইচ ঘিরে পুরো এলাকা যেন মেতে ওঠে উৎসবে। অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা, যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখা, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রেখে সাধারণ মানুষকে নির্মল আনন্দ দিতেই এই নৌকাবাইচের আয়োজন বলে জানান আয়োজক কমিটির সদস্যরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিবচরের বাঁশকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এই নৌকাবাইচ।
এতে অংশ নেয় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ১০টি নৌকা। বিলপদ্মা নদীতে প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথের নৌকাবাইচ দেখার জন্য লাখো নারী-পুরুষ নদীর পাড়ে, রাস্তায়, ব্রিজে এবং নৌকা-ট্রলারে করে নদীতে অবস্থান নেয়।
নৌকাবাইচ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাদারীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী।
নৌকাবাইচ দেখতে আসা স্থানীয় রেশমা আক্তার নামের এক গৃহবধূ বলেন, নৌকাবাইচ দেখতে দূরের আত্মীয়-স্বজনেরা এসেছেন বাড়িতে। বাইচ উপলক্ষে এখানে ঘরে ঘরেই মেহমান এসেছে। খুবই ভালো লাগছে, সবাইকে নিয়ে বাইচ দেখছি। এক অন্য রকম উৎসব।
মো. ইচাহাক নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের এই শেখপুর ও আশেপাশের এলাকা বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরে থাকতো। এক সময় এখানকার ঘরে ঘরে ডিঙি নৌকা ছিল। নৌকায় ঘুরাফেরা করতাম। তখন নৌকাবাইচ হতো। পানিতেই নৌকা নিয়ে বাইচ দেখতাম। এখন আর আগের মতো পানি হয় না। তবে নৌকাবাইচ এই অঞ্চলের ঐতিহ্য। খুবই ভালো লাগছে বাইচ দেখতে। ছোট ছেলে-মেয়েরা খুবই আনন্দ পাচ্ছে।
আয়োজক সূত্র জানায়, নৌকাবাইচে প্রথম স্থান অর্জন করেন শিবচরের বাঁশকান্দি ইউনিয়নের মৃজাকান্দি জাগরণ সংঘ, রানার্সআপ হয় কালাম সিপাই ও দেলোয়ার সিপাই’র নৌকা এবং তৃতীয় স্থান মো. তরিকুল ইসলামের নৌকা। প্রথম স্থান অর্জনকারীকে ১৩ সিএফটি ফ্রিজ, রানার্সআপ ১১ সিএফটি ফ্রিজ এবং তৃতীয়স্থান অর্জনকারী নৌকাকে ৪২ ইঞ্চি টেলিভিশন পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়। এছাড়া নৌকাবাইচে অংশ নেওয়া অন্য সাতটি নৌকাকে অংশগ্রহণকারী পুরস্কার হিসেবে টেলিভিশন দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, নৌকাবাইচ আমাদের দেশের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। এখানে এতো মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এখনও মানুষ এই ঐতিহ্য ভুলে নাই।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
এসআরএস