ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাবেক এমপি রনির ছেলের কাছ থেকে ঘুষ, ট্রাফিক কনস্টেবল প্রত্যাহার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
সাবেক এমপি রনির ছেলের কাছ থেকে ঘুষ, ট্রাফিক কনস্টেবল প্রত্যাহার

ঢাকা: পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির ছেলে রিয়াদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করায় ট্রাফিক রমনার নিউ মার্কেট জোনে কর্মরত কনস্টেবল আশরাফকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে উপ-কমিশনারের (ডিসি) সংযুক্ত ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ট্রাফিক কনস্টেবল আশরাফের এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে প্রত্যাহার ও তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ আগস্ট। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির ছেলে রিয়াদের গাড়ি থামান ট্রাফিক কনস্টেবল আশরাফ। এরপর গাড়ির কাগজপত্র হাতে নিয়ে মামলা থেকে রিয়াদকে বাঁচাতে তিন হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন তিনি। এ সময় রিয়াদ মামলা দিতে বলেন। কিন্তু তা না করে রিয়াদকে এক ঘণ্টা গাড়িসহ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখেন আশরাফ। পরে বাধ্য হয়ে ১০০০ টাকা ঘুষ দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান রনির ছেলে।

এ ঘটনা তুলে ধরে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন গোলাম মাওলা রনি। এতে তিনি লেখেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার খোন্দকার গোলাম ফারুক যদি বিষয়টি দেখতেন এবং আমার ছেলের কাছ থেকে আদায় করা ঘুষের ১০০০ টাকা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতেন তবে পুলিশ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস এবং আস্থা অটুট থাকতো!

বিষয়টি ডিএমপি কমিশনারের নজরে আসলে তিনি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারকে (ট্রাফিক) ঘটনার তদন্ত করতে বলেন। রনির অভিযোগ ও কমিশনারের নির্দেশনায় পরবর্তীতে তদন্তে নামে ট্রাফিক রমনা বিভাগ। তদন্তে দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা হয়। জানা যায়, তার নাম আশরাফ। তিনি ট্রাফিক রমনার নিউ মার্কেট জোনে কর্মরত। অভিযোগ প্রাথমিক প্রমাণিত হওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে আশরাফকে ডিসি কার্যালয়ে সংযুক্ত করে ডিএনপি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর কমিশনারের নির্দেশে নিউমার্কেট এলাকায় দায়িত্বরত সব ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট, কনস্টেবলদের ডেকে পাঠানো হয়। ‍শুনানি করা হয়। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দীর্ঘসময় নিয়ে অভিযুক্তকে শনাক্ত করে অভিযোগকারী গোলাম মাওলা রনিকে আসতে অনুরোধ করা হয়।

তিনি তার ভুক্তভোগী ছেলেসহ এসে ঘটনায় জড়িত কনস্টেবল আশরাফকে শনাক্ত করেন। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে আমার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে আশরাফের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও শাস্তিতে ডিএমপি কমিশনারের ভূয়সী প্রশংসা করেন গোলাম মাওলা রনি। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ফেসবুক আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ছবির ভদ্রলোকের নাম খন্দকার গোলাম ফারুক, তার বর্তমান পদবী ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার! তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় নেই-কোনো দিন কথা হয়নি এমনকি সামনাসামনি দেখাও হয়নি! কিন্তু তার অভিব্যক্তি দেখে মনে হতো- তার নিকট অভিযোগ করলে ন্যায় বিচার পাবো!

আমার অভিযোগ ছিল-ট্রাফিক পুলিশের এক সিপাহী আমার ছেলে রিয়াদের গাড়ি থামিয়ে তার নিকট থেকে এক হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেছে। বিষয়টি বিস্তারিত লিখে ১১ই সেপ্টেম্বর, সোমবার দুপুরে আমি আমার ফেসবুক পেইজে একটি স্ট্যাটাস দেই!

উল্লেখিত বিষয়টি জনাব ফারুকের নজরে আসে এবং তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন যা পুরো ট্রাফিক বিভাগে নজিরবিহীন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে! ঢাকা দক্ষিণ ট্রাফিকের (হবে রমনা ট্রাফিক বিভাগ) ডিসি জয়নুল আবেদিন পুরো নিউমার্কেট এলাকায় দায়িত্বরত সব ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট, সিপাহীকে ডেকে পাঠান এবং গতকাল দীর্ঘসময় নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রথমে মোটিভেশনাল প্যারেড করেন! তারপর অভিযুক্তকে শনাক্ত করার প্রাথমিক কাজগুলো করে আমাকে ফোন করে তার অফিসে চায়ের দাওয়াত দেন। আজ সকাল ১১.০০ টায় আমি আমার ছেলেকে নিয়ে সার্কিট হাউজ সড়কে ঢাকা দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের উপ কমিশনারের কার্যালয়ে যাই।

কুশল বিনিময়ের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার জন্য ১৫/১৬ জনের টিমকে আমাদের সামনে আনা হয় যাদের মধ্যে থেকে আমার ছেলে একজনকে শনাক্ত করে। উপ কমিশনার জনাব জয়নুল আবেদিন তার কর্মকর্তাদেরকে নিয়ে এবার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জেরা করে ঘটনার সত্যতা পান এবং তৎক্ষণাৎ দৃষ্টান্তমূলক বিভাগীয় শাস্তি প্রদান করেন!

আপনি যদি উল্লেখিত দৃশ্যটি নিজ চোখে দেখতেন তবে আমার বিশ্বাস ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের বর্তমান নেতৃত্ব সম্পর্কে আপনার ধারনা পাল্টে যেত! আমি সম্মানিত পুলিশ কমিশনার জনাব খন্দকার গোলাম ফারুক সাহেবকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি! তার পুরো টিমকেও ধন্যবাদ এবং দুনিয়া-আখেরাতে তারা যেন মহান আল্লাহর নিকট থেকে উত্তম প্রতিদান লাভ করেন এই দোয়া করছি!

উপ-কমিশনার জয়নাল আবেদিন এবং এডিসি রানা সাহেব আমার অভিযোগটি নিষ্পত্তি করার জন্য গত দুইদিন ধরে যে শ্রম দিয়েছেন তার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং শুভ কামনা! আল্লাহ হাফেজ!

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।