লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগতির চর বাদাম এলাকায় পারিবারিক বিরোধের জেরে সাবেক স্ত্রী রাশেদা বেগম (২২) ও তার বাবা আবুল বাশারকে (৫৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে সুমন (৩২) নামে এক যুবক।
পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চর বাদাম ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম চর কলাকোপা গ্রামের চৌরাস্তা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবুল বাশার ইটভাটার শ্রমিক। নিহত রাশেদা তার একমাত্র মেয়ে। তার আরও চারটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এদিকে নিহত রাশেদা ও ঘাতক সুমনের ঘরে জিহাদ নামে তিন বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। সুমন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে৷
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন নিহত রাশেদার মা আঙ্গুরী বেগম (৪৫) ও দাদি আমেনা বেগম (৭৫)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইমস অ্যান্ড অপস) হাসান মোস্তফা দুইজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, সুমন তার শ্বশুর আবুল বাশারের কাছ থেকে যৌতুক দাবি করতেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিকভাবে অশান্তি চলছিল। এ ঘটনার জেরে প্রায় ৫ মাস আগে রাশেদার সঙ্গে সুমনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মাস খানেক আগে রাশেদার বাবা মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেন। এ নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সুমন। এর জেরে সুমন তার সাবেক শ্বশুরবাড়িতে এসে আবুল বাসার, আঙ্গুরি বেগম, রাশেদা ও দাদি আমেনা বেগমকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে।
এতে ঘটনাস্থলেই রাশেদা ও তার বাবা আবুল বাশারের মৃত্যু হয়েছে৷ রাশেদার মাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্বজনরা। আর আহত আমেনা বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার দুই হাতের আঙুলে আঘাত করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত রাশেদার ভাই ফয়সাল (১২) বলে, মাগরিবের পর আমি, আমার ছোট ভাই সাইফুল (৮), আমার বোন রাশেদা, বাবা-মা এবং দাদি ঘরের ভেতরে ছিলাম। আমার বোনের আগের স্বামী সুমন ঘরের ভেতরে ঢুকে প্রথমে আমার বোনকে ছুরিকাঘাত করে। তাকে বাঁচাতে গেলে আমার বাবা-মা ও দাদিকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। আমি কাছে গেলে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর তড়িঘড়ি করে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যায়।
ফয়সাল জানায়, সুমন প্রায়ই তার বোনকে মারধর করতো। সর্বশেষ গত রমজান ঈদে সুমন তাদের বাড়িতে আসে। সে সময় তাকে বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়নি। তখন সে হুমকি দিয়ে গেছে। একই কথা জানিয়েছে তার ছোট সাইফুলও।
নিহতদের আত্মীয় মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সুমন বখাটে ও মাদকাসক্ত ছিল। সে আগে আরও দুটি বিয়ে করেছে। সেখানে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। রাশেদাকে নিয়ে সে চট্টগ্রামে থাকত। রাশেদা সেখানে গার্মেন্টসে চাকরি করত। টাকার জন্য রাশেদাকে প্রায়ই নির্যাতন করতো বলে শুনেছি। এ কারণে প্রায় ৫ মাস আগে রাশেদার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মাস খানেক আগে নোয়াখালীর আন্ডারচর এলাকায় আবদুল কাদের নামে এক ছেলের সঙ্গে রাশেদার বিয়ে দেয় তার পরিবার। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে সুমন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইমস অ্যান্ড অপস) হাসান মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একজন গুরুতর আহত, আরেকজন কিছুটা আহত হয়েছে। পারিবারিক কলহের জেরে সুমন এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর সুমন পালিয়ে গেছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
** রামগতিতে স্ত্রী ও শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যা
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
আরএ