খুলনা: ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। মানুষের সচেতনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের করণীয় এবং নীরব এলাকা বাস্তবায়ন অগ্রগতি’ বিষয়ক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. ফিরোজ শাহ।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দেওয়া তথ্যমতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ মানুষ শব্দদূষণের শিকার। মানবদেহের ৩০টি কঠিন রোগের অন্যতম কারণ শব্দদূষণ। ৫০ ডেসিবলের চেয়ে উচ্চ শব্দ মানবদেহে উচ্চ রক্তচাপ, ৬৫ ডেসিবলের চেয়ে উচ্চ শব্দ হৃদরোগ সৃষ্টিকারী, ৯০ ডেসিবলের বেশি উচ্চ শব্দ স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং ১২০ ডেসিবলের চেয়ে উচ্চ শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে পারে। এমনকি গর্ভবতী নারী শব্দদূষণের মধ্যে থাকলে বধির সন্তানের জন্ম হতে পারে।
এছাড়া শব্দদূষণের কারণে মাথা ধরা, আতঙ্ক-অবসাদগ্রস্ত হওয়া, অনিদ্রা ও শিশুদের মেধার বিকাশ ব্যাহত হয়। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী নীরব ঘোষিত এলাকায় সর্বোচ্চ ৫০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবল ও শিল্প এলাকায় সর্বোচ্চ ৭৫ ডেসিবলের বেশি মাত্রার শব্দ সৃষ্টির সুযোগ নেই। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের জরিপে খুলনা শহরের কিছু স্থানে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ১৩২ ডেসিবল পর্যন্ত শনাক্ত করা হয়েছে।
শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী নীরব ঘোষিত এলাকায় হর্ন বাজানো দণ্ডনীয় অপরাধ। আবাসিক এলাকার পাঁচশ মিটারের মধ্যে শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা মান মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। অনুমতি ব্যতীত শব্দ সৃষ্টি করলে প্রথমবার অপরাধের ক্ষেত্রে একমাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং পরবর্তীতে প্রতিবার অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড আরোপ করা যেতে পারে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) মো. সাজিদ হোসেন, উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. কাজী আবু রাশেদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)’র প্যানেল মেয়র-২ মো. আলী আকবর টিপু, সিনিয়র সাংবাদিক মো. মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ, এসএম জাহিদ হোসেন, কেসিসি কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন প্রমুখ বক্তৃতা দেন। কর্মশালায় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, মসজিদের ইমাম ও গণপরিবহনের চালকরা অংশ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
এমআরএম/এমজে