ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ড. ইউনূসকে হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয়: দুদক সচিব  

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৩
ড. ইউনূসকে হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয়: দুদক সচিব   দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন

ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার আইন অনুযায়ী কাজ করে ব্যক্তি পরিচয় দেখার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ সঠিক নয়।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুদক কার্যালয়ের সামনে অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন এসব কথা বলেন।

দুদক সচিব বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক সততা পাওয়ায় মামলা হয়েছে। এখানে হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয়। মামলার আসামিকে কখন কিভাবে গ্রেপ্তার হয় সেটির আইনি ব্যাখ্যা আছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা সেটি জানেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সচিব বলেন, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ২০১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের নিট মুনাফার ৫ শতাংশ লভ্যাংশ বণ্টনের অনিয়মের বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন তাদের নিজস্ব প্যাডে একটি অভিযোগ দাখিল করে। এ অনিয়ম সংক্রান্তে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় গেছে মর্মে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনসহ কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীদের অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় তা স্মারক ২০২২ সালের ১৪ জুলাই মূল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবরে প্রেরণ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ড. মো. ইউনূসের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারীদের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বিধায় দুদকের হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয়।

তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন একটি অনুসন্ধানটিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধানটিম অনুসন্ধান শেষে অভিযোগটির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা করার সুপারিশ করে একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপিত হলে মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে কমিশনের পক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি করেন।

তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বোর্ডের সদস্যরা অসৎ উদ্দেশে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎপূর্বক অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর/রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক বা পাচারের ছদ্মাবরণে আত্নসাৎ করায় ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। গতকাল ও আজকে ৭ জনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। বাকিদেরও বক্তব্য রেকর্ড করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে দুদক কার্যালয়ে আসেন ড. ইউনূস। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাড়ে বেলা ১১টার দিকে দুদক কার্যালয় ছাড়েন তিনি।

ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দুদক থেকে নোটিশ পাওয়ার পর জবাব দিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন।

এর আগে গত বুধবার গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।

এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর অসৎ উদ্দেশে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও অর্থপাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনকে তলব করে দুদক। দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আপনার বক্তব্য শোনা ও নেওয়া প্রয়োজন। বক্তব্য দেওয়ার জন্য দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কাজে সহযোগিতার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।

গত ৩০ মে অসৎ উদ্দেশে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্তাদি লঙ্ঘনপূর্বক জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে অর্থ আত্মসাৎপূর্বক অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর বা রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন, গ্রামীণ টেলিকম চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, পরিচালক নাজনীন সুলতানা, পরিচালক মো. শাহজাহান, পরিচালক নূরজাহান বেগম, পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।

জানা গেছে, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে গ্রামীণ টেলিকমের ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় ৮ মে ২০২২ সালে একটি হিসাব খোলা হয়, যার নম্বর: ২১৫১৫০০০০২৫৬৮। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তি ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল সই হয়। গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও তার একদিন আগেই ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল হলেও এই অ্যাগ্রিমেন্টে ৮ মে খোলা ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব।

রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র এক কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অসৎ উদ্দেশে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্তাদি লঙ্ঘন করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে আত্মসাৎ করেছেন। এ অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর বা রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করেছেন, যা দণ্ডবিধি এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় ২০২৩ সালের ৩০ মে দুদক উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানের মাধ্যমে মামলাটি করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২৩
এসএমএকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।