ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বাঘে খাওয়া শিপারের পরিবারে ঘোর অমানিশা, সহায়তা কামনা

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৩
বাঘে খাওয়া শিপারের পরিবারে ঘোর অমানিশা, সহায়তা কামনা বাঘে খাওয়া শিপার হাওলাদারের অসহায় পরিবার, ইনসেটে শিপার

বাগেরহাট: অভাব-অনটকে দিন পার করছে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের গ্রাসে পরিণত হওয়া শিপার হাওলাদারের পরিবার। পরিবারের একমাত্র ভরসাকে হারিয়ে দিশেহারা তারা।

প্রতিদিনের খাবার জোগানোই এখন সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে তাদের।

সুন্দরবনের নদী-খালে ধরা মাছ বিক্রি করে যা পেতেন তা দিয়ে সংসার চালিয়ে নিতেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার পশ্চিম রাজাপুরের শিপার হাওলাদার। মেয়ে সিনথিয়া ও স্ত্রী স্ত্রী মোরশেদা বেগমকে নিয়েই ছিল তার ছোট্ট সোনার সংসার।

কিন্তু ২৭ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে ঝাঁকি জাল নিয়ে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তুলাতলা এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন শিপার।  

নিখোঁজের চার দিন পর ১ অক্টোবর সকালে ওই এলাকা থেকে শিপারের দেহ বিচ্ছিন্ন মাথার খুলি, শরীরের দুটি হাড় ও তার পরনে থাকা প্যান্ট-গেঞ্জি উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরবর্তীতে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী শিপারের দাফন সম্পন্ন হয়।

পরিবারের ভরণপোষণ একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে অমানিশার ঘোর অন্ধকারে ডুবে গেছেন শিপারের স্ত্রী মোরশেদা বেগম।  
তিনি বলেন, তিনজনের সংসারে সিনথিয়ার বাবাই ছিল একমাত্র ভরসা। অনেক টাকা পয়সা না থাকলেও, স্বামী কাছে ছিল এতেই আমার শান্তি ছিল। সে (শিপার হাওলাদার) তো চলে গেল, এখন আমাদের কি হবে। এই মেয়েকে কীভাবে আমি মানুষ করব! জীবনটা অন্ধকারে ঢেকে গেল।  

২৩ বছর বয়সী মোরশেদা আরও বলেন, আমার মেয়ের বয়স মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর। একটি ঘর ছাড়া আমাদের তো আর কিছু নেই। শ্বশুরেরও এই বাড়ি ছাড়া কোনো জমি-জমা নেই। নিজের বাবাও বৃদ্ধ, তাকে চলতে হয় অন্যের ওপর ভরসা করে। কয়েক মাস পরে মেয়েকে স্কুলে দিতে হবে। কীভাবে কি করব জানি না।

শিপারের বাবা ফারুক হাওলাদার ও ১৭ বছর বয়সী ছোট ভাই ফোরকান হাওলাদারও জেলে। তারাও সুন্দরবন থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলের এমন মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন অসহায় বাবা ফারুক হাওলাদার।  

তিনি বলেন, শিপার সুন্দরবনে যাওয়ার আগেই আমি সাগরে গেছিলাম মাছ ধরতে। ৩০ সেপ্টেম্বর সাগর থেকে ফিরে শুনি চারদিন ধরে শিপার বাড়ি আসে না। ফোনও বাড়িতে রেখে গেছে। পরের দিন সুন্দরবনে অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমার বাবার মাথার খুলি পেয়েছি। বাবা তো চলে গেছে, কিন্তু এখনও আমার নাতিনের কি হবে! আপনারা যারা আছেন, তারা যদি একটু সহযোগিতা করেন তাইলেই হয়ত মেয়েটা বেঁচে থাকতে পারবে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ জেলে ফারুক হাওলাদার।

সুন্দরবনে বাঘ এবং কুমিরের আক্রমণে কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত হলে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম।  

কিন্তু সেই সুবিধাও পাবে না অসহায় পরিবারটি। কারণ শিপার হাওলাদার বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিলেন।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, শিপার বন বিভাগের পাশ না নিয়েই সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিলেন। যার কারণে আমাদের পক্ষ থেকে তাকে কোনো সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশ নিয়ে সুন্দরবনে গেলে আমরা তাকে আইন অনুযায়ী সহযোগিতা করতে পারতাম।  

এজন্য সকল জেলে ও স্থানীয়দের পাশপার্মিট নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করার অনুরোধ করেন এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কামাল হোসেন তালুকদার বলেন, শিপার অনেক ভালো ছেলে। সে পাশ নিয়েই সুন্দরবনে যেত। বাড়ির পাশেই বন হওয়ায় হয়তো পাশ নেয়নি। এরপরেও মানবিক দৃষ্টিতে শিপারের পরিবারকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। কারণ, শিপারের স্ত্রী ও সন্তানের বেঁচে থাকার মতো কোনো অবলম্বন নেই। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে সুন্দরবন বন বিভাগ, উপজেলা পরিষদ, মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনসহ সকলের কাছে শিপারের পরিবারকে সহযোগিতার আবেদন করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২৩
এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।